বন্দিদের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করছে মিয়ানমারের সৈন্যরা - দৈনিকশিক্ষা

বন্দিদের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করছে মিয়ানমারের সৈন্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী বাহিনী। সেনাসদস্যদের অভিযানে আড়াই দিন ধরে গ্রামটি আতঙ্কের মধ্যে ছিল। এসময় সেখানে চোখ বেঁধে পেটানো, গরম পেট্রোল গায়ে ঢেলে দেয়াসহ অনেককে প্রসাব খেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুক্রবার (৭ জুন) বিবিসি বাংলা অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, সৈন্যরা আরাকান আর্মির সমর্থকদের খুঁজছিল, যেটি মিয়ানমারের সবচেয়ে কার্যকর জাতিগত বাহিনীর একটিতে পরিণত হয়েছে। ১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৫১ জনকে ‘সহিংস নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। আরাকান আর্মির ধারণা মৃতের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি হবে।

মিয়ানমারের তিন বছরের গৃহযুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে জঘন্যতম নৃশংসতার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিল বা জান্তা সরকার।

একজন নারী বলেন, “তারা পুরুষদের জিজ্ঞাসা করছিল যে এই গ্রামে আরাকান আর্মি আছে কি না।”

“আরাকান আর্মি ছিল বা ছিল না বা তারা জানে না- যে উত্তরই দেয়া হোক না কেন, সৈন্যরা তাদের আঘাত করেছিল।”

মাত্র ছয় মাসের মধ্যে, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে সামরিক বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

তারা গত বছর সেনাবাহিনীর সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি শেষ করে এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে সম্মিলিত অভিযানে দেশের অন্যান্য অংশের জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়।

“আমি নিজের চোখে দেখেছি সামরিক গাড়িতে তুলে আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার ছেলেকে আমাদের দুজনের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছে। আমি জানি না সে কোথায় আছে। এখন আমি এও জানি না যে আমার স্বামী-সন্তান বেঁচে আছে না মরে গেছে,” বলেন এক নারী।

নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারা বলেছে, মাত্র এক হাজার পরিবারের গ্রামটির প্রত্যেককে দুইদিন ধরে সূর্যের নিচে খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে। এসময় তাদের খুব সামান্যই কিছু খাওয়া বা পানের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

ডজনখানেক পুরুষের হাত-চোখ বেঁধে রাখে তারা। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের অনেকেই এখনো ফেরেননি।

“সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে তারা পানি চাইতো। কিন্তু সৈন্যরা পানির বোতলে প্রস্রাব করে পুরুষদের হাতে দিতো,” বলেন ওই নারী৷

‘প্রচুর গুলির শব্দ’ শুনেছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু ‘মাথা নিচু করে রাখার কারণে’ কাকে গুলি করা হয়েছে তা দেখতে পাননি।

“আমি তাকানোর সাহস পাইনি। তারা আমার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে ডাকে। তারপর আমি গুলির শব্দ পাই। তিনি আর ফিরে আসেননি।”

পুরোটা সময় তিনি কাঁদছিলেন কারণ তিনি তার স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন: “আমি জানি না তারা মরে গেছে না বেঁচে আছে। আমি তাদের জন্য প্রার্থনা করছি, বুদ্ধ, দয়া করে তাদের রক্ষা করুন।”

জীবিতরা বলছেন, মৃতদেহ কবর দেয়ার জন্য সৈন্যরা কোদাল চাইছিলো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাতাল ছিল।

বুধবার ১০০ জনেরও বেশি সৈন্য সিত্তওয়ে রাজ্যের রাজধানীর ঠিক বাইরে অবস্থিত বিয়াই ফিউ গ্রামে অভিযান চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একটি বড় বন্দর ও বিমানবন্দরসহ দুই লাখ বাসিন্দার সিত্তওয়ে শহরটি বার্মিজ সেনাবাহিনীর অবশিষ্ট কয়েকটি দুর্গের একটি। কিন্তু বিদ্রোহীরা কাছেই আছে, আর তারা জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের সহানুভূতি পাচ্ছে।

আরাকান আর্মির সমর্থনে যেসব পুরুষ শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকিয়েছিল তাদের বিশেষভাবে নির্যাতনের জন্য আলাদা করা হয়েছিল বলে জানান স্থানীরা।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সৈন্যরা উল্কি আঁকা চামড়া কেটে সেখানে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী একজন সেনা কর্মকর্তার কথা বলেন। গত বছরের শেষের দিকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়া উত্তরের শান রাজ্যের উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা গ্রামবাসীকে বলেন যে তিনি সেখান থেকে তদের ওপর প্রতিশোধ নিতে এসেছেন।

১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে আধিপত্য বিস্তার করে আসা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্য হারানো ছিল সবচেয়ে বেশি অপমানজনক।

শুক্রবার বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ নারী, শিশু এবং বয়স্কদের কিছু জিনিস দিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তারা জানায়, সৈন্যরা ইতোমধ্যে তাদের বাড়ি থেকে সোনা, গহনা বা সোলার প্যানেলের মতো মূল্যবান কিছু জিনিস লুট করেছে। স্থানীয়দের প্রথমে সিত্তওয়ের একটি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু তাদের বেশিরভাগই শহরের বৌদ্ধ বিহারে আশ্রয় নিতে গেছে।

বুঝতে পারছে যে সেনাবাহিনী এখনও বিয়াই ফিউ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কাউকে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রামের অনেক অংশ পুড়িয়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিয়াই ফিউতে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এনইউজি। ‘ফ্যাসিবাদী সামরিক পরিষদের’ বিরুদ্ধে ‘ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা’ এবং বিয়াই ফিউতে কিছু নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ করে আরাকান আর্মি।

জান্তা সরকার নির্যাতনের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বলছে, গ্রামে বালির বস্তার বাঙ্কার দেখার পর তারা কেবল ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’র ব্যবস্থা করেছে। তাদের অভিযোগ, সিত্তওয়ের ওই এলাকা থেকে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।

রাখাইন রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা ও সংঘাতের তীব্রতায় অদূর ভবিষ্যতেও বিয়াই ফিউতে ঘটা ঘটনার স্বাধীন তদন্ত প্রায় অসম্ভব।

আত্মবিশ্বাসী ও সক্ষম সশস্ত্র বিরোধী আন্দোলনের মুখে ধারাবাহিকভাবে হারতে থাকা সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের অন্য জায়গাগুলোতে কী ঘটাতে পারে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান তারই এক অশুভ সতর্কবাণী দিচ্ছে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030829906463623