বন্যার বিষয়ে আগে থেকে কেনো বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে পারলো না? - দৈনিকশিক্ষা

বন্যার বিষয়ে আগে থেকে কেনো বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে পারলো না?

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যার বিষয়ে পূর্ব সতর্কতা থাকলেও যে মাত্রায় বন্যা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা ছিল না। এ ধরনের আকস্মিক ও প্রবল মাত্রার বন্যার জন্য প্রস্তুতি নেয়াটা 'কঠিন' বলে জানাচ্ছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

আকস্মিক এ বন্যার বিষয়ে অন্তত তিন দিন আগে থেকে সতর্কতা ছিল এবং বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করার পূর্বাভাসও ছিল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের। 

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই আকস্মিক বন্যার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে বন্যা যে ব্যাপকতায় আসছে আমাদের প্রাথমিক সমীক্ষায় সেই ব্যাপকতার কথা ছিল না।”

বন্যার প্রস্তুতির বিষয়ে পূর্বাভাস কেন্দ্র যা বলছে

আকস্মিক এ বন্যা গ্লোবাল চ্যালেঞ্জের অংশ জানিয়ে মি. রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বন্যা অতি প্রবল মাত্রার হয়েছে। আর আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ডই 'একদিনের লিডটাইম'। সেই হিসাবে আসলে প্রস্তুতি নেয়া এমনেই কঠিন। যদি খুবই বড় মাত্রার বন্যা হয় তবে একদিনের প্রস্তুতি যথার্থ না। এটা আসলে গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ আর কি।”

বিশ্বের নানা জায়গাতেই আকস্মিক বন্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ধরনের বন্যায় অনেক অনিশ্চয়তা থাকে জানিয়ে মি. রায়হান আরো বলেন, “এ বন্যাতে সাধারণত সর্বোচ্চ তিন দিনের বেশি সময় ওভাবে ইফেক্টিভলি পাওয়া যায় না। আকস্মিক বন্যায় অনেক অনিশ্চয়তা থাকে। অন্তত তিন দিন আগে থেকেই ওয়ার্নিং ছিল। একদিন আগে ডেঞ্জার লেভেলের ফোরকাস্ট দেয়া ছিল, যে ডেঞ্জার লেভেল ক্রস করবে।”

আকস্মিক বন্যায় তিন দিন পর্যন্ত সতর্কতা থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের যে ইনিশিয়াল এস্টিমেশন ছিল তার তুলনায় বন্যাটা তীব্র হয়েছে। আমরা যে পরিমাণ পানি আশা করেছিলাম তার থেকে বেশি এসেছে। ফলে বন্যাটা অতি চরম আকার ধারণ করেছে।”

“এছাড়া মৌসুমী লঘুচাপের কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাগরের জোয়ারের লেভেল হাই ছিল। সব মিলিয়ে বন্যাটা তীব্র আকার ধারণ করেছে।”

উজানে নদনদীর তথ্য নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছিল জানিয়ে মি. রায়হান বলেন, “গোমতী নদীতে ভারতের অমরপুর পয়েন্ট থেকে ডাটা পেয়েছি।”

“অমরপুর পয়েন্ট ভারত – বাংলাদেশ থেকে ৮০ কি.মি উজানে। সেখান থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ সবসময়ই তথ্য শেয়ার করে আমাদের সাথে। নিয়মিতভাবেই এ তথ্য পেয়েছি। উজানে পানি বাড়ছে অন্তত একদিন আগে থেকেই আমরা জানতাম।” 

ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে বন্যার এ মাত্রা কি না-এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান মি. রায়হান।

“ভারতের বাঁধের ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাদের সাথে নদ-নদীর পানির বিষয়ে শেয়ার করা হয়। কিন্তু বাঁধের কোনো বিষয় শেয়ার করা হয় না।”

গত ২৪ ঘণ্টায় পানি কিছুটা বেড়েছে এবং বৃহস্পতিবার পাঁচ থেকে ছয়টি জেলা বিপৎসীমার উপরে আছে বলে জানান তিনি।

“আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখাচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত কমে যাবে। আশা করা যাচ্ছে আজকে পানি স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। কাল থেকে পানি কমা শুরু করতে পারে। পরবর্তী সময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে,” যোগ করেন মি. রায়হান।

যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাঁধ খুলে দেওয়ার মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে অসহযোগিতা করছে। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টাদের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “উজানের পানি ধেয়ে এসে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করছে এবং কোনো প্রকার আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেবার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে।”

আবহাওয়া নিয়ে অধিদপ্তর যা বলছে

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত মৌসুমী বায়ু বিস্তৃত রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে অধিদপ্তর। একইসাথে এ প্রবণতা শুক্রবার ও শনিবারও অব্যাহত থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, গত সপ্তাহ থেকেই ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এসব জায়গাতে বৃষ্টি হবে এমনকি কক্সবাজারসহ অত্র অঞ্চলে পাহাড় ধসের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ বছরের বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হবে এমন পূর্বাভাস এ বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত আবহাওয়া বিষয়ক এক সম্মেলনে দেয়া হয়েছিল বলে জানান মি. রশীদ।

তিনি বলেন, “মে মাসে সম্মেলনে বলা হয়েছিল, পুরা বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হবে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই ছিল। বেসিকেলি বৃষ্টি যে বেশি হবে এবং তার ফলে বিভিন্ন মেট্রোলজিক্যাল এনালিসিস করে বলা হয়েছিল এবার বর্ষাকালে বৃষ্টি বেশি হবে।”

বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ চার মাস বর্ষাকাল।

তিনি বলেন, “এবারের বর্ষাকালে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি বৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল ওই সম্মেলনে।”

এদিকে, ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য ত্রিপুরার গোমতী নদীর ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়া নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা সঠিক নয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, বন্যার কারণে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

আক্রান্ত জেলার সংখ্যা অন্তত দশটি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্গতদের এক কোটি ৮২ লক্ষ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে - dainik shiksha শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - dainik shiksha মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের - dainik shiksha অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034809112548828