বয়স্কদের অনীহা ও নগর এলাকায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীর প্রাপ্যতা সংকটে বড় ঝুঁকিতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় না হওয়া, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়া, নিয়মিত অভ্যন্তরীণ অডিট না হওয়া এবং প্রকল্পের ডিপিপিতে সুনির্দিষ্ট কোনো এক্সিট প্লান না থাকা এ প্রকল্পের বড় প্রতিবন্ধকতা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বর্তমানে প্রকল্পটির সপ্তম পর্যায় বাস্তবায়ন করছে, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদে সপ্তম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে। গণশিক্ষায় বয়স্কদের অনীহা দূর করতে প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণশিক্ষায় বয়স্কদের অনীহা দূর করতে প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অনেকে ক্ষেত্রে প্রবীণরা তাদের সমাজের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে গণশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন। এ ছাড়া অনেকেই এটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে অবহেলা করেন। তাই এ বিষয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে বয়স্করা গণশিক্ষায় আগ্রহী হবেন, যা সমাজের জন্য ইতিবাচক হবে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নব্বইয়ের দশকে ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’-এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী ও অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সবার জন্য শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমামদের সম্পৃক্ত করা; প্রতিটি উপজেলায় রিসোর্স সেন্টার কাম অব্যাহত শিক্ষা পাঠাগার পরিচালনা ও মনিটরিং জোরদার করা; আলেম-ওলামাদের বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে ৭৩ হাজার ৭৬৮টি শিক্ষাকেন্দ্রের (প্রাক-প্রাথমিক, সহজ কোরআন শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা) মাধ্যমে এক কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০২০ থেকে ৪টি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৯৭ লাখ ২০ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক, শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শিক্ষা, সাক্ষরতা, ধর্মীয়, নৈতিকতা ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ে সচেতনতা শিক্ষা প্রদান করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের শেষ বছরে অর্থাৎ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত অবশিষ্ট ২৪ লাখ ৩০ হাজার ২০০ জনকে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৫০টি রিসোর্স সেন্টার কাম অব্যাহত শিক্ষা পাঠাগার পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় শুধু প্রথম অর্থবছর অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পাদিত হয়েছে। তবে প্রকল্প মেয়াদে সিএজির অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিয়মিতে অডিটে ১৭টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে একটি নিষ্পত্তি হলেও অবশিষ্ট ১৬টি অডিট আপত্তির ক্ষেত্রে ব্রডশিট জবাব দেওয়া হয়। প্রকল্পের ২৬টি সাব-প্যাকেজের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭টি ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। inside-ad]
প্রকল্পের আওতায় জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৪টি শিক্ষাবর্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাঠদানের লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রকল্পের আওতায় চলমান ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪ এ সমাপ্ত হবে।
প্রকল্পটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সমীক্ষা চলাকালে পরিদর্শনকৃত ২৪০টি নমুনা শিক্ষাকেন্দ্রের সবগুলোই পর্যবেক্ষণকালে চলমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থী জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। সহজ কোরআন শিক্ষা কোর্স সম্পন্নকারী নমুনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শরিফ পড়তে পারে এবং বয়স্ক শিক্ষা কোর্স সম্পন্নকারী নমুনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সাক্ষরতা জ্ঞান লাভ করেছেন।