রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আলোচিত সেই আতিকুর রহমান খানকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার আইডিয়ালের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান তাকে বরখাস্ত করে চিঠি দিয়েছেন।
আইডিয়ালের একটি সূত্র জানায়, আজ বিকেলে আতিকের বাসায় ঠিকানায় চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের আগে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে তার নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। এ জন্য নিয়োগ পাওয়ার পর বেতন ভাতা হিসেবে নেওয়া ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯২০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর যোগ দেন মো. আতিকুর রহমান। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের কোনো পদ না থাকলেও আতিকুর রহমানকে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগের ক্ষেত্রেও মানা হয়নি কোনো শর্ত। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ছিল চার বছরের।
আরও পড়ুন:
আইডিয়াল স্কুলের কর্মচারী সেই আতিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
ভর্তিবাণিজ্য : দ্বিতীয় দফায় দুদকের মুখোমুখি আইডিয়ালের আতিকুর
স্কুলের একাধিক সূত্র বলছে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের উত্থান শুরু হয় তার বড় ভাই সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল সালামের হাত ধরে। এরপর সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম এবং বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। যদিও সভাপতির সঙ্গে সম্প্রতি তার দূরত্ব বেড়েছে বলে সূত্র বলছে। সভাপতির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তাকে শেষ পর্যন্ত চাকরিচ্যুত হতে হলো।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর অত্র প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত আছেন। লিফট কেনাকাটায় অনিয়ম, সময়মত সরবরাহ না করায় গত ৯ অক্টোবর আপনাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। যার উত্তর আপনি ১২ অক্টোবর লিখিতভাবে দেন। আপনার কারণ দর্শানোর জবাব কর্তৃপক্ষের নিকট সন্তোষজনক মনে হয়নি।
গত ১৭ অক্টোবর আপনাকে লিখিতভাবে জানানো হয় যে, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপনি প্রতিষ্ঠানের মতিঝিল অফিসে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করবেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আপনি সে আদেশ যথাযথভাবে পালন না করে আপনার ইচ্ছামতো অফিসে আসা যাওয়া করছেন।
এছাড়াও গত ১৭ অক্টোবর চিঠির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিবেদন প্রদান করার কথা থাকলেও তা আপনি অবমূল্যায়ন করে যাচ্ছেন। অদ্যাবধি আপনার নিকট থেকে উক্ত কাজের কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী সমিতির স্টেশনারি বেনামে চুক্তি করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আপনি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী হিসাবে যা চাকরিবিধি পরিপন্থি। এ প্রতিষ্ঠানের চাকরি করে বিশ্বাস বাজার নামে ব্যবসা, ভিশন-৭১ নামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পরিচালনা করছেন যা চাকরিবিধি পরিপন্থি।
এসব বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানের আদেশ অমান্য, কর্তব্য অবহেলা, পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আপনার বিরুদ্ধে দুদকে তদন্ত চলছে।