বাংলাদেশে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে ভিনদেশী অপরাধী চক্র - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে ভিনদেশী অপরাধী চক্র

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নানা অজুহাতে ব্যবসা, খেলাধুলা, ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বিদেশি নাগরিকরা। বিশেষ করে নাইজেরিয়া, ক্যামেরুনসহ আফ্রিকা অঞ্চলের নাগরিকরা এসে অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব অপরাধীদের গ্রেফতার করা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিদেশি অপরাধীদের মূল চক্রের নাগালও খুজে পায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের এক বৈঠকে বিভিন্ন দেশের অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অবৈধভাবে বিদেশিদের বাংলাদেশে অবস্থান ও অপরাধে কারা কিভাবে জড়িত, কাদের নামে মামলা রয়েছে, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, কতজন জেলে আছে এসব একটি তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সে তালিকা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক বছর ধরে বিদেশিদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশি অপরাধী চক্রের সহযোগিতা নিয়ে পার্সেল প্রতরনা, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, জাল নোটের ব্যবসা, চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সামাজ্য গড়ে তুলছে বিদেশিরা। তারা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বসে বিদেশি অপরাধী চক্রগুলো বাংলাদেশে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা হলেও নিয়ন্ত্রন করা যায়নি। অনেক অপরাধের ক্ষেত্রে দেশীয় সহযোগিরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতা বিদেশি চক্রকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিক। যদিও এর সঠিক পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই। এরমধ্যে আনুমানিক ৫ হাজার নাগরিকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। এরপর তারা জামিন নিয়ে আবারও অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন নাগরিক আবার জামিন নিয়ে গোপনে নিজ দেশে চলেও গেছেন।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এসব বিদেশিরা এদেশে এসেই পাসপোর্ট নষ্ট করে ফেলে। ঢাকায় ওইসব দেশের দূতাবাস নেই বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সহায়তা করতে পারেনা। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওই সব দেশের অপরাধীরা বছরের পর বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যায়। রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, নিকুঞ্জ, বনশ্রীসহ অভিজাত এলাকায় এরা বাড়িভাড়া অথবা হোটেল ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (ডিবি) কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃত আফ্রিকানদের সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়েও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ গ্রেপ্তারকৃত অধিকাংশ আফ্রিকান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তাদের পাসপোর্ট বা বাংলাদেশে প্রবেশের বৈধ কোন কাগজপত্রের হদিস মেলে না। ফলে তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া যায় না। দুই বছর আগে ঢাকায় ক্রডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে ডিবি ৬ ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা জামিন নিয়ে গোপনে নিজ দেশে চলে যায়।

অনলাইনে প্রতারণা, বিনিয়োগে কোটিপতির স্বপ্ন, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, জাল মুদ্রা, হুন্ডি, মাদক কারবার, মুদ্রা পাচার ও সোনা চোরাচালান এমনকি ছিনতাইসহ যাবতীয় অপকর্মে জড়িত এসব অবৈধ বিদেশি নাগরিকরা। টুরিস্ট, খেলোয়াড়, বিজনেস কিংবা স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে।

গত তিন বছরে দুই শতাধিক বিদেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশে ফেইসবুকে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণা, হেরোইন, কোকেন ও অপ্রচলিত মাদকের কারবার, ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি, ক্রেডিট কার্ড জালিযাতি, জাল ডলার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো এবং মানবপাচারে জড়িত থাকার অপরাধে এদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বছরের নভেম্বর মাসে শুরুতে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ক্যামেরুনের চার অবৈধ নাগরিকসহ ছয়জনকে। তারা মাদক কারবার ও অনলাইনে প্রতারণায় জড়িত। আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করে বিদেশি এই অপরাধীরা। গত ২৭ আগস্ট বারিধারা ও কাওলা থেকে সিসম, মরো মহাম্মদ, মরিসন, অ্যান্থনি নামে নাইজেরিয়া ও ঘানার চার নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গত ২১ জুলাই পল্লবী থেকে বাংলাদেশি নারীসহ ১২ নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) সূত্র জানায়, এ দেশে অবৈধ বা বৈধভাবে বসবাসকারি বিদেশি প্রতারক চক্রের প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর বিদেশি নাগরিকের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। গত চার মাসে প্রায় এক হাজার বিদেশির ওপর অনুসন্ধান ও নজরদারি করা হয়। দেশে প্রায় দুই লাখ বিদেশি অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে ১৭ হাজার আফ্রিকানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছে, যারা দেশের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এদের মধ্যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারি ১৫ হাজার বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১৫ হাজার অবৈধ বিদেশির মধ্যে ৫ হাজার বিদেশি নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত ১০টি দেশের কয়েক হাজার অপরাধীর তালিকা তৈরি করে অভিযান শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের অপরাধ করার সঙ্গে সহায়তাকারী দেশীয় অপরাধী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযানে নেমেছে পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, এসবি। এছাড়া অবৈধ বিদেশিদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। বিদেশিদের কাছে বাসা ভাড়া দেয়ার সময় বাড়ির মালিককে অবশ্যই তার পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখতে হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবহিত করতে হবে।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003432035446167