মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি চাকরি–সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন করছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ দুটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস–পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো তালাবদ্ধ করেন। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির ছিল কিছুদিন। বর্তমানে দাবি পূরণের শর্ত সাপেক্ষে ভবনগুলোর তালা খুলে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলন অব্যাহত আছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নন ক্যাডার কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার কয়েকটি পদে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব পদের বিপরীতে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না। এর প্রতিবাদে ও সারা দেশে সমন্বিত ডিগ্রি (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি) চালুর দাবিতে ৬ জুন থেকে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্র সমিতির সহসভাপতি শাহরিয়ার খন্দকার বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাণিসম্পদ সেক্টরকে প্রাণিজ উৎপাদন ও পশুচিকিৎসা দুটি শাখায় বিভক্তিকরণ, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল গঠন, নন-ক্যাডার পদগুলোতে সমন্বিত ডিগ্রির অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা, উপজেলা পর্যায়ে শুধু পশুপালন ডিগ্রিধারীদের জন্য লাইভস্টক এক্সটেনশন অফিসার পদ সৃষ্টি করা, প্রাণিসম্পদ সেক্টরের জন্য উন্নয়নমূলক বোর্ড গঠন এবং জেলা পর্যায়ে অ্যানিমেল নিউট্রিশন কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি ও পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসারের পদসংখ্যা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া সমন্বিত ডিগ্রি চালু করা যাবে না। এসব দাবিতে ৮ জুন থেকে টানা পাল্টা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
পশুপালন অনুষদের ছাত্র সমিতির সহসভাপতি রেজউয়ান উল আমিন বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণা চলছে। সেখানে তথাকথিত সমন্বিত ডিগ্রি বর্তমানে প্রচলিত স্নাতক ডিগ্রির সমকক্ষ হবে না। ফলে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরাই সেখানে গুরুত্ব পাবেন, এটাই যুক্তিসংগত।
দুটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ জুন অর্ধদিন প্রশাসনিক ভবন ও কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। আর ১৮ জুন বিক্ষোভ মিছিল শেষে দুপুর বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের গেট তালাবদ্ধ করে রাখেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন তাঁরা প্রক্টর ভবন, কোষাধ্যক্ষ ভবন এবং কিছু সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূবালী ব্যাংকও তালাবদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলনের জেরে ১৯ জুন দিনব্যাপী প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর ভবন, কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় ও গ্রন্থাগার তালাবদ্ধ করে ভবনগুলোর সামনে আন্দোলন করে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
পশুপালন অনুষদের শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, দুটি অনুষদের আন্দোলনের মধ্যেই ১৩ জুন নিয়োগ বিধিমালায় ডিভিএম ডিগ্রিধারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়ালের নির্দেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেন বাকৃবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. অলিউল্লাহ। এরপর ১৮ জুন সেই চিঠিতে তথ্য ভুল ছিল উল্লেখ করে চিঠিটি বাতিলের জন্য আরেকটি চিঠি পাঠান তিনি। ১৯ জুন দ্বিতীয় চিঠি বাতিল করতে পুনরায় চিঠি পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০ জুন চতুর্থবারের মতো সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে ১৩ জুন থেকে পাঠানো সব চিঠিকে আমলে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছাজেদা আখতার বলেন, ১৩ তারিখের চিঠির বিষয়ে পশুপালন অনুষদের ডিনকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। উপাচার্যের সম্মতি ছাড়া কখনোই ওই চিঠি পাঠানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বাকৃবির চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, দুটি অনুষদের আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে রূপ ধারণ করে। বিষয়গুলো অস্বাভাবিকের দিকে মোড় নিলে প্রেরিত চিঠিগুলো বাতিল করার জন্য পুনরায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।