বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিলুপ্ত সহ-উপাচার্যের দপ্তরে সম্প্রতি ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১১ বছরে স্নাতক শেষ করা এক ছাত্রলীগ নেতাকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ নিয়ে। এসব নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও যেসব দপ্তরে কর্মী নিয়োগে হয়েছে, সেসব দপ্তরের মধ্যে বিরোধ সামনে এসেছে। বুধবার (২২ নভেম্বর) আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন হাবিবুর রনি।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন পদে মোট ১৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ৫ অক্টোবর। এরপরই নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসন্তোষের বিষয়টি সামনে আসে।
নিয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের পদ ফাঁকা রয়েছে। এরপর গত বছর সিন্ডিকেট বৈঠক ডেকে ওই দপ্তরই বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে সর্বশেষ নিয়োগে সহ-উপাচার্যের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পিয়ালকে। একই দপ্তরে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিয়াম আহমেদকে। এই দপ্তরবিহীন পদে নিয়োগ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সহ-উপাচার্যের দপ্তর না থাকা সত্ত্বেও সেখানে যে নিয়োগটা হয়েছে, সেটা পূর্ববর্তী প্রশাসন নির্ধারণ করে গিয়েছেন। এখানে আমার কোনো বিষয় নেই। ওই দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।’
যোগদানপত্র গ্রহণ করেনি বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ফার্মের ফার্ম ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে। তবে সেই পদে যোগদান করতে গেলে তা গ্রহণ করেননি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান এ কে এম মাসুম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাঁর যোগদানপত্র না নেয়ার কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের ওয়ার্কশপ টেকনিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেনকে। কিন্তু ওই পদেও তাঁর যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগ। সূত্র বলছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা আর কর্মদক্ষতার অভাব বোধ করায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন বিভাগের কর্মকর্তারা।
১১ বছরে পাস করা নেতাকে নিয়োগ
সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে পানি সরবরাহ বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা আতিক শাহরিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ জানিয়েছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে ভর্তির ১১ বছরের মাথায় ডিগ্রি অর্জন করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসানের বিশেষ অনুগ্রহে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। পরে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়োগ দেওয়ায় পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আতিক শাহরিয়ার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী সময়ে আমাকে অনেক পরে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিলে আমি স্নাতক সম্পন্ন করি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আবেদন করে সব পর্যায় সম্পন্ন করে চাকরিতে মনোনীত হয়েছি।’
এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিন্ডিকেট বৈঠক ব্যতীত লিখিত পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম পূর্ববর্তী বোর্ড সম্পাদন করেছে। আমরা কেবল প্রার্থীর কাগজপত্র দেখেছি। কাগজপত্র সঠিক ছিল বলে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।’ নিয়োগের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগদানপত্র না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা বিজ্ঞাপনের যোগ্যতা অনুযায়ী মনোনীত হয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের যোগদানপত্র না নেয়ায় আমরা অন্যত্র যোগদানের ব্যবস্থা করেছি।’
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী এবার নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমানের অনুসারী এবং কেউ সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের অনুসারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, এই ছাত্রলীগ কর্মীসহ এবারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন জড়িত।
তবে এসব নিয়োগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি। পরে একাধিকবার সরাসরি দেখা করতে গেলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি।