নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি ভুল বা অসঙ্গত বলে অভিযোগ উঠেছে। বইয়ের বিভিন্ন ছবি ও তথ্যউপাত্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নির্দেশনা ছিলো কিছু ছবি পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়ার। কিন্তু তা বই থেকে বাদ দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নিজেই।
তিনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই প্রণয়নে কিছু ছবি আমরা বই থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেসব ছবিও নতুন পাঠ্যবইয়ে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম ও নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সবার মত নিয়ে পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হবে বলেও জানান তিনি। শিগগির এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বইয়ের এসব ভুল ইচ্ছাকৃত নাকি, ভুলবশত যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। পাঠ্যবইয়ের ভুল ও অসঙ্গতি নিয়ে দুইটি কমিটি করা হবে। একটি কমিটি সবার কাছে থেকে বই নিয়ে মতামত সংগ্রহ করে তা যাচাই বাছাই করবে। আর অপর কমিটি বই মুদ্রণে কোনো ত্রুটি আছে কি-না বা সর্ষের ভেতরই ভূত কি-না তা খতিয়ে দেখবে।
মন্ত্রী বলেন, মত সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকবেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা। যারা বইয়ের ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তি তুলছেন তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরায় থাকবেন। তারা একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্মে সবার মতামত নেবেন। একটি লিংক থাকবে সেখানে প্রবেশ করে সবাই বই নিয়ে মত দিতে পারবেন। সেসব বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কমিটি কাজ করবে ও প্রয়োজনীয় সংশোধন দেবেন। আর অপর কমিটি খতিয়ে দেখবে এসবের পেছনে কারো গাফিলতি আছে কি-না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা বইগুলো পরীক্ষামূলক হিসেবে দিয়েছি। সারা বছর আমরা সবার কাছ থেকে মতামত নেবো। সেই পরামর্শ অনুযায়ী পরিমার্জন পরিশীলনের সুযোগ থাকবে। বইগুলো প্রণয়নের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বইয়ের কোথাও যেন ধর্ম, বর্ণ, পেশা, লিঙ্গ বিদ্বেষ-বৈষম্য না থাকে তার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। ভুলটা হয়তো বড়, যা আরও আগে চিহিত হওয়া দরকার ছিলো, সংশোধন হওয়া দরকার ছিলো। আগে না হলেও এটি নিয়ে এখন যে আলোচনা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সে সংশোধন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকাল সামাজিক মাধ্যম অনেক সরব। সেই মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, রাজনীতির মাঠ সব জায়গা থেকেই আমরা বইয়ের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুনছি। আমরা আগেও বলেছি বইগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রণয়ন করেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার দায়িত্বে যারা আছি এবং এ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছি, মানুষের মধ্যে বইগুলো নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কিছু ভুল সংশোধন করা হয়েছে। যেগুলো ওয়েবসাইটে আছে। অপরদিকে শিক্ষকদের সংশোধনের বিষয়ে জানানো হচ্ছে। ওয়েবসাইটেও সংশোধিত বই পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে সচিব মো. কামাল হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, জাতীয় শিক্ষা কর্ম ও পাঠ্যপুস্তক বইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরাদুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ অনেকে।