দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বাস, মিনিবাস, ট্রাকের ফিটনেস বছরে দুবার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা করলে যাত্রী, চালক ও সহকারীকে জরিমানা করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হাইকোর্টের সাত নির্দেশনার মধ্যে এগুলোও রয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক্সপ্রেসওয়ে, জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। গত বুধবার থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০১৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৩১ হাজার ১৬৩ জনের। আহত হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৭২ জন। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ২ হাজার ৩২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ২ হাজার ২৩৮ জনের। আহত হয়েছে ৪ হাজার ৩২০ জন।
২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় আয়কর আইনজীবী মোখলেছুর রহমান নিহত হলে তাঁর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৬ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিহতের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান। ওই রুল নিষ্পত্তি করে ২০২২ সালের ২৬ জুন সাতটি নির্দেশনাসহ রায় দেন বিচারপতি জোবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় গত বছরের ১৯ জুন।
রায়ের অনুলিপি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনারকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। ওই দুর্ঘটনায় একজন পথচারীও নিহত হন।
রায়ে নিহত মোখলেছুর রহমানের পরিবারকে রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক মাওলানা আমির হোসেনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনাগুলো পুরো বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রিটকারী আইনজীবী শাহীন আহমেদ বলেন, বাসমালিক ১০ মাসেও ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তাঁরা আদালত অবমাননার মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এসব নির্দেশনা মানা হলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়, প্রায় সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বাস, মিনিবাস ও ট্রাক জড়িত। মোটরযান অধ্যাদেশে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ। তাই এসব যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে ‘গতি নিয়ন্ত্রক ডিভাইস’ লাগাতে হবে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণ ব্রেক ফেল। এটি নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি ছয় মাস পরপর বাস, মিনিবাস ও ট্রাকের ফিটনেস পরীক্ষা করতে হবে।
ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান বলেন, আদালতের এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে তিনি মনে করেন।