প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবগঠিত মন্ত্রিসভার আকার আরও ১০ থেকে ১২ জনের মতো বাড়তে পারে। পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীও থাকতে পারেন।বর্তমান মন্ত্রিসভায় সদস্য ৩৬ জন। এর মধ্যে অর্ধেকই নতুন। মন্ত্রিসভার আকার বাড়লে আরও একজন টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রির দায়িত্ব পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির যেকোনো সময় মন্ত্রিসভার আকার বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সরকারের কর্মপরিধি সহজ করার স্বার্থে সংরক্ষিত আসনে নারী এমপিদের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেও চমক ও নতুনত্ব রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদায়ী মন্ত্রিসভার আকার ছিল ৪৮ সদস্যের। নতুন ১০ বা ১২ জন জন যুক্ত হলে বর্তমান মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়াবে ৪৬ বা ৪৮ জনে। নতুন করে কারা আসছেন মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানান আলোচনা।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের কাজটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই করে থাকেন। তাই এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মন্ত্রী হবেন কারা, কে কে মন্ত্রিসভায় আসবেন-এটা একান্তভাবেই প্রধানমন্ত্রী জানেন। সরকারের প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তেও পারে।’
গতবারের মতো এবারের মন্ত্রিসভায়ও অনেক বৈচিত্র্য এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভায় অর্ধেকের বেশি নতুন মুখ। মন্ত্রীদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট হিসেবে দু’জনকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁদের রাখা হয়েছে তাঁদের সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিজয়ী হয়ে আসা সংসদ সদস্য। শরিক দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। গত মন্ত্রিসভার ১৫ জন মন্ত্রী ও ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রিসভা বণ্টনের পর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
কর্মপরিধি বড় এমন মন্ত্রণালয়েও একজন করে দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নেই। এ দুটি মন্ত্রণালয় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে একজন করে মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্ত্রিসভার আকার বড় করা হলে এসব মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে একজন মাত্র প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানেও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হতে পারে।
স¥ার্ট বাংলাদেশ গড়তে দলের নির্বাচিত পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ কয়েকজন সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত নারী আসন থেকে দু-একজন এবং শরিক দল ও টেকনোক্র্যাট কোটায় আরও কয়েকজন আসতে পারে বর্ধিত মন্ত্রিসভায়। গত কয়েকদিন ধরে সরকারি দলের মধ্যে এ ধরনের গুঞ্জন চলছে। মন্ত্রিসভায় এখন পর্যন্ত সবাই আওয়ামী লীগের। শরিক দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। শরিক থেকে একজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে- সেটি টেকনোক্র্যাট কোটাও হতে পারে।
এ ছাড়া নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত সাবেক সচিবদের মধ্য থেকেও কেউ যুক্ত হতে পারেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ঘুরে ফিরে যাঁদের নাম আসছে তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ফেনী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিমের নাম রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও দেশের খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের নাম উঠেছে সবার ওপরে।
মন্ত্রিসভার আকার বাড়লে আরও একজন টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রির দায়িত্ব পেতে পারেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক জোটে আসন পেয়েছে দুটি। গতবারের শরিক দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাই এবার শরিকদের মধ্যে এমপি হওয়া দু’জনের মধ্যে একজনকে মন্ত্রিসভায় রাখা হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের চার জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে কোনো মন্ত্রী করা হয়নি। বিগত দু’টি সরকারে এইসব জেলায় একাধিক মন্ত্রী ছিলেন। এই এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হককে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করার জন্য উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের দাবি রয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলেও মহাজোটের স্বার্থে দলীয় প্রধানের নির্দেশে তিনি ত্যাগ স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
একইভাবে মহাজোটের স্বার্থে বারবার ত্যাগ স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না। মন্ত্রিসভার রদবদলের একমাত্র এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁদেরই দেখা যাবে নতুন সরকারের বর্ধিত মন্ত্রসভায় নতুন মুখ হিসেবে।