আয়কর থেকে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদে এ খাতে আদায় বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর জন্য নয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সংস্থাটি তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে করের আওতা, উৎসে ও বকেয়া কর আদায়ে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। পাশাপাশি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাড়ি ভাড়া দেয়া মালিকদের রিটার্ন জমা নিশ্চিত করবে বলে এনবিআর সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এনবিআরের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুধু আয়কর থেকেই গত অর্থবছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বা ৩২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে। বাড়তি এ রাজস্ব আয় করতেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর জন্য আইএমএফেরও তাগিদ রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আগেই রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা এখন থেকে তা কঠোরভাবে নজরদারি করবে এনবিআর। এর মাধ্যমে রিটার্ন জমার পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বাড়ি মালিকদের রিটার্ন জমা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের কমিশনারদের মাসে অন্তত দুবার পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
করের আওতা বাড়াতে ডিপিডিসি, ডেসকো ও বিআরটিএর সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) চুক্তি করেছে এনবিআর। মূলত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে নতুন করদাতা শনাক্ত করবে সংস্থাটির বিভিন্ন কর অঞ্চল। প্রতি মাসে দুবার এসব তথ্য প্রতিবেদন আকারে এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন করদাতা শনাক্ত করতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চলের কার্যক্রম জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর।
রাজস্ব আয় বাড়াতে উৎসে কর কেটে রাখার বিষয়টিও এনবিআর নিয়মিত নজরদারি করতে চায় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সংস্থাটি সম্প্রতি একটি আদেশ জারি করেছে, যেখানে বিভিন্ন খাতের উৎসে কর কেটে নিয়ে কোন কর অঞ্চলে জমা দিতে হবে তার নির্দেশনা রয়েছে সে আদেশে। উৎসে কর বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলকে বলা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে উৎসে কর জমা দেয়ার জন্য স্টেকহোল্ডারদের উদ্বুদ্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন কর অঞ্চলে প্রতি মাসেই গণশুনানির আয়োজন করতে বলেছে এনবিআর, যেখানে করদাতারা কর পরিশোধ করতে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা শুনবেন কর্মকর্তারা। নিয়মিত সভা আয়োজন করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে কর অঞ্চলগুলোকে।
এনবিআরের আদেশে বকেয়া কর আদায় বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এজন্য হালনাগাদ তালিকা করে মাসভিত্তিক বকেয়া কর আদায় করতে হবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী। বছর শেষে মোট আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য তা প্রতিদিন পরিদর্শী রেঞ্জ কর্মকর্তারা তদারক করবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী অগ্রিম আয়কর আদায় বাড়াতেও পদক্ষেপ নিতে বলেছে এনবিআর। একই সঙ্গে আপিল ও ট্রাইবুন্যালের বিচারাধীন মামলা, নিরীক্ষাভুক্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি ও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন সম্ভাবনাময় আয়কর মামলার তাদারকি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর থেকেই রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরকে দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এনবিআর মূলত পরোক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। তবে কর দিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং কর দেয়ার পদ্ধতি যত বেশি পারা যায় সহজ করা জরুরি। কেননা এনবিআর আয়কর আইনে অনেক নিয়ম-কানুন এনে এটাকে জটিল করে ফেলছে। আইনটিকে এমনভাবে সহজ করতে হবে যাতে করদাতারা নিজেই কর দিতে উদ্বুদ্ধ হন; সাক্ষাৎ, আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন কমে আসে।’