বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের মধ্যে ছয়জনের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। শুধু এমপি মো. হারুনুর রশিদের আবেদনটি গৃহীত হয়নি। গতকাল রবিবার রাতে এ গেজেট জারি হয়েছে।
এর আগে গতকাল সকালে বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ওই পাঁচজন হলেন জি এম সিরাজ (বগুড়া-৬), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশারফ হোসেন (বগুড়া-৪) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)। অসুস্থ থাকায় উকিল আবদুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) ও বিদেশে থাকায় হারুনুর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) অনুপস্থিত ছিলেন।
চলতি সংসদের মেয়াদপূর্তির এক বছর আগেই বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলেন। গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনগুলোতে উপনির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে শূন্য হওয়া আসনগুলোতে আগামী মার্চের প্রথম ভাগের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন।
গত শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির জনসভায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলটির সংসদ সদস্যরা। গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সংসদ ভবনে স্পিকারের দপ্তরে যান তাঁরা। স্পিকারের সঙ্গে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন এবং পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বৈঠক শেষে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘তাঁরা (বিএনপির সংসদ সদস্য) সাতজনের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাঁচজন সশরীরে ছিলেন, তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৬৭(২) অনুযায়ী ওই আসনগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুজনের পদত্যাগপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’ স্পিকার বলেন, এর মধ্যে আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। সংসদ সচিবালয় স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখবে এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলবে। সব ঠিক থাকলে ওই আবেদনও গৃহীত হবে। তবে বিদেশ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হারুনুর রশিদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে না। তাঁকে পরে এসে জমা দিতে হবে। কারণ তাঁর সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার সংবিধানের সংশ্ল্লিষ্ট অনুচ্ছেদটি পড়ে শোনান এবং বলেন, ‘পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এ বিষয়ে এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয় কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই ওই আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশিত হবে। আসন শূন্যের গেজেট প্রকাশের পর তাঁদের (পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য) কাছে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। পরে অধিবেশন যখন বসবে সেখানেও জানানো হবে। ’
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে স্পিকারের দপ্তরের সামনে লিখিত পদত্যাগপত্রটি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ওই পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘...মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে এবং জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী এই সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। ’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা স্পিকারের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছি। আগে ই-মেইলের মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবে স্পিকারকে ফোনেও জানিয়েছি। তিনি কিছুটা বিস্মিত হলেও পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ’
বিএনপির প্রতীকে নির্বাচিত গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তাঁরা তো গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আজকে আমরা পদত্যাগ করেছি। তাঁদের পদত্যাগের বিষয়টি তাঁরা বলতে পারবেন। ’
পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘বিএনপিদলীয় সদস্যরা পদত্যাগ করার মাধ্যমে সংসদ শতভাগ অবৈধ হয়েছে। কৌশলগত কারণে দলের সিদ্ধান্তে আমরা সংসদে ছিলাম। ’ পদত্যাগকারী আরেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সংসদে ছিলাম, আশা করেছিলাম সরকারের বোধোদয় হবে। কিন্তু সেটা হয়নি, বরং সংকট বেড়েছে। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু কী দেখেছি...নির্বিচারে গুলি করেছে তাদের ওপর। ...আমাদের মহাসচিবকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দেয়নি। ফলে গণতন্ত্র যেখানে নেই, আমরা সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলাম। ’
২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয়। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী হন এবং পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। এক বছর বাকি থাকতেই তাঁরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেন।
৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন : বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ রাজনৈতিক ব্যাপার। কমিশনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। বিএনপির দাবি থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইভিএম ব্যবহার করবে কমিশন। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপির আস্থা ফেরাতে কাজ করবে ইসি। কোনো একটি দলের কথায় কমিশন পদত্যাগ করবে না।