বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রাস্তাঘাটে বক্তব্য সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছে আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
আদালত বলে, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। ওই আপিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন একটা বিষয়ে এভাবে রাস্তাঘাটে মন্তব্য করা, বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়। এরপর আদালত খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করে। আগামী ২৪ আগস্ট তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আপিল বিভাগে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার মামলায় হাইকোর্টে রায়দানকারী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। বিচারের রায় নিয়েও তিনি অবমাননাকর মন্তব্য করেন। মেয়রের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। বিষয়টি নজরে আসায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য শফিক রায়হান শাওন, মাহফুজুর রহমান রোমানসহ চার আইনজীবী। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, এভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারপতি ও মামলার রায় নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। এটা আপনাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগের বিচারক। একজন বিচারপতি সম্পর্কে মেয়র যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, তাতে কোর্টের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। রায় হয়েছে তাতে আপিলের সুযোগ রয়েছে। তাই বলে এভাবে বিরূপ মন্তব্য করা যায় না। যদি এ ধরনের ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে কোর্টের প্রতি জনমনে আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে।
মেয়রের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, পাবলিক মিটিংয়ে তিনি এই বক্তব্য রেখেছেন। উনি তার বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞাত। উনি এটা কনটেস্ট করতে চান না। বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ মেয়রকে তলবের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।