বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল এর জন্ম দিন আজ। তিনি ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সুইডেনের স্কটহোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আলফ্রেড নোবেলের বাবা ইমানুয়েল নোবেল ছিলেন একজন প্রকৌশলী ও উদ্ভাবক। আলফ্রেডের মা আন্দ্রিয়েতা।
আলফ্রেড নোবেলের বাবা ইমানুয়েল নোবেল সুইডেনের স্কটহোম শহরে সেতু ও ভবন কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা করতেন। এ কাজে বিস্ফোরক হিসেবে বারুদ ব্যবহৃত হতো। এই বারুদ আরো শক্তিশালী করার জন্য অনেক গবেষণা করেন তিনি।
ব্যবসার যখন রমরমা অবস্থা, তখন ঘটে অঘটন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ তার একটি জাহাজ ডুবে যায়। ফলে বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এরপর আলফ্রেডের মা আন্দ্রিয়েতা এবং অন্যদের সন্তানদেরসহ রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ফিনল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন তিনি।
আর ইম্যানুয়েল ব্যবসা করতে চলে যান সেন্ট পিটার্সবার্গে। সেখানে তিনি একটা ছোট দোকান দেন যন্ত্রাংশের। এখান থেকেই ইম্যানুয়েল রাশিয়ার মহামান্য জার ও সেনাবাহিনীর জেনারেলদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে আলফ্রেডের বয়স যখন নয় বছর, তখন তার বাবার আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হওয়াতে পুরো পরিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসে।
আলফ্রেড সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে এসে নাইট্রিক এসিডকে কীভাবে বশ মানানো যায়, সেই পরীক্ষা শুরু করেন। এর মধ্যে ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাবা ইম্যানুয়েলের মাইন তৈরির কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। তিনি ফিরে যান সুইডেনে।
পৈত্রিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আলফ্রেড এবং তার দুই ভাই থেকে যান সেন্ট পিটার্সবার্গে। তারা এ বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন গৃহশিক্ষক নিকোলাইয়ের কাছে। নিকোলাই তখন আলফ্রেডকে মনে করিয়ে দেন—নাইট্রোগ্লিসারিন দিয়ে রাসায়নিক বিস্ফোরক তৈরির সম্ভবনার কথা। কামারের দোকানে গিয়ে একটি পাত্রের ওপর সামান্য পরিমাণ তরল নাইট্রোগ্লিসারিন রেখে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে বিস্ফোরণ ঘটালেন নিকোলার।
ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দুর্ঘটনা ছাড়াই যথেষ্ট পরিমাণ নাইট্রোগ্লিসারিন এসিড তৈরি করেন। তারপর সেই তরল যৌগটির সঙ্গে বারুদ মিশিয়ে তৈরি ঘন তরল পদার্থ, যা ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের বাইরে বরফে জমাটবাঁধা নদীতে বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। এরপর তিনি ফিরে যান স্টকহোমে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিস্ফোরক তৈরির কারখানা স্থাপন করেন আলফ্রেড।
১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আলফ্রেডের কারখানায় এক বিস্ফোরণে মারা যান ছোট ভাই এমিলসহ ৭ জন। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি নিরাপদ বিস্ফোরক আবিস্কার করেন। আর এটিরই নাম ডিনামাইট। এরপর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডিনামাইট বাণিজ্যিক হারে উত্পাদন শুরু করেন। তত দিনে ডিনামইট আবিষ্কারের জন্য আলফ্রেড বিখ্যাত হয়ে গেছেন। পাহাড় ভাঙা, টানেল ও খাল খনন করা সহজ হলো ডিনামাইটের সাহায্যে। ফলে ডিনামাইটের চাহিদা দিন দিন বাড়তে লাগলো।
আলফ্রেড প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় স্বভাবের ছিলেন। তিনি ছিলেন মেধাবী, কঠোর পরিশ্রমী ও খুই বাস্তববাদী। বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে আলফ্রেডের ১০০টি কারখানা ছিলো। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি মানসিক বার্ধক্যের শিকার হন।
১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল তার অর্জিত সম্পদ থেকে জনকল্যাণে হিতকর কাজ করার জন্য নোবেল দেয়ার বিষয়ঢি চূড়ান্ত করেন। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর এ পুরস্কার দেয়ার জন্য উইল করেন আলফ্রেড নোবেল। জনকল্যাণে হিতকর কাজ করার জন্য আলফ্রেড নোবেল তার সম্পদের মোট ৯৪ শতাংশই ভালো কাজের স্বীকৃতি-স্বরূপ পাঁচটি বিষয়ে (পদার্থ, রসায়ন, শরীরতত্ত্ব বা চিকিত্সাবিদ্যা, সাহিত্য ও শান্তি) পুরস্কার দেয়ার কথা লিখে যান।
আলফ্রেড তার উপার্জিত সম্পদ জনকল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে এক দিনে নেননি। বহু দিন ধরেই তিনি উইল তৈরি করেছেন। অনেক ভেবে-চিন্তেই তিনি এটি রচনা করেছেন। আলফ্রেড নোবেল তার উইল অনেকবার সংশোধনের পর প্যারিসের সুইডিশ নরওয়েজিয়ান ক্লাবে বসে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ নভেম্বর চূড়ান্ত করেন। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর তিনি ইতালিতে মারা যান।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। তবে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পুরস্কার চালু হলেও সে বছর কোনো বিজয়ীকে স্বর্ণপদক দেয়া হয়নি। কারণ, তখন পর্যন্ত স্বর্ণ পদকের নকশার কাজ শেষ হয়নি। পরে অবশ্য তাদের কাছে স্বর্ণপদক পৌঁছে দেয়া হয়।