দেশে দুর্নীতি বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, ‘দেশে উচ্চবিত্ত পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও দুবাইসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করছে। ব্যাংক খাতেও এসব প্রভাবশালী অর্থ লুটপাটের ঘটনায় জড়িত। দু-একজনকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হলেও টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত আরো অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।’
তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে সামাজিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বৃদ্ধ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে এ স্কিম শুরু করা হয়, যা বর্তমান সরকারের সাহসী উদ্যোগ। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা অব্যাহত রেখেই উপকারভোগীরা পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারলে আরো ভালো হতো। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। যারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে নির্বাচনী তহবিল জোগানের উদ্যোগ হিসেবে দেখছে, তাদের সেই সমালোচনা যথার্থ নয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রচলিত সঞ্চয় স্কিমের মতো মনে হলেও এটি পেনশন গ্রহীতাদের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। পেনশন খাতে জমাকৃত অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। এর জন্য সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ট্রেজারি বন্ড, লাভজনক অবকাঠামোয় পেনশন স্কিমের টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি যাতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে বাধা না হয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ পেনশন পেতে হেনস্তার শিকার হতে হয় কিনা সে ব্যাপারেও জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। অনেকে মনে করেন মূল্যস্ফীতির হিসাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম খুব একটা লাভজনক না-ও হতে পারে। সমতা স্কিমের আওতায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ৫০ শতাংশ চাঁদা প্রদানের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। সমতা স্কিমে যাদের আয় বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা তারা ৫০০ টাকা দিলে সরকার ৫০০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিমে প্রতিষ্ঠান চাইলে চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করতে পারবে। তবে প্রগতি স্কিমে মালিক পক্ষের চাঁদা দেয়ার বিষয়টি শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্ত করে নির্দেশনা প্রদান করলে বেসরকারি চাকরিজীবীরা উপকৃত হবেন।’
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনাকে টেকসই ও আরো জনবান্ধব করতে তিনি ১০ দফা সুপারিশ করেন। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে স্কিমে অংশগ্রহণ করতে হলে আগের সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এ শর্ত বাতিল করা; শ্রমজীবী মানুষের জন্য টানা ১০ বছর চাঁদা প্রদানের বিষয়টি শিথিল; চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে নমিনির পেনশনের অর্থ বুঝে পাওয়ার মেয়াদ সাত বছরের স্থলে তিন বছর করা; একজন সুবিধাভোগী জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ঋণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ উত্তোলন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের নিবন্ধিত ব্যক্তি জরুরি প্রয়োজনে জমাকৃত চাঁদা যাতে একবারে উত্তোলন করা যায় সে বিধান রাখা।
‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সুরক্ষায় সহায়ক হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক শেখ নাজমুল হক সৈকত ও জাকির হোসেন এবং স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।