টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার রাথুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মাজারে চলছে ওরস। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী মেলা। মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের জন্য বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি কক্ষে চলে মেলায় আসা অতিথিদের আপ্যায়ন। এতে গত রোববার ও গতকাল সোমবার বিদ্যালয়টিতে পাঠদান বন্ধ থাকে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওরস উপলক্ষে মাজার কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার থেকে বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ আর সামনের মাঠ ব্যবহার করছে। বিদ্যালয়ের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে নিচতলার একটি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে অতিথি আপ্যায়নের জন্য, যেখানে সকালে প্রথম শ্রেণি আর বিকেলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের, যেখানে সকালে দ্বিতীয় শ্রেণি আর বিকেলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। এসব কারণে বিদ্যালয় খোলা থাকলেও পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পাশেই চলছে রান্নার আয়োজন। মাজার প্রাঙ্গণে সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চ শব্দে বাজানো হচ্ছে গান। বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে নানা পণ্যের দোকান বসানো হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন শিক্ষকের সবাইকে উপস্থিত পাওয়া যায়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। শিক্ষার্থী এলেও পাঠদান বন্ধ থাকার কথা জানার পর তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল।
এ সময় প্রথম শ্রেণির ছাত্র অপূর্বর মা সেলিনা আক্তার ‘সামনে বাচ্চাগো ফাইনাল পরীক্ষা। এই সময় স্কুল বন্ধ রাইখা মেলা চালানোর কারণে পড়ালেখার ক্ষতি হইতাছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ের আঙিনা মাজার কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
গতকাল সকালে নাগরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাঠদান বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজখবর নিয়ে আপনাকে পরে জানাব।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরে আবার যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে জানার পরপরই আমি রাথুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে পাঠদান বন্ধ থাকার সত্যতা পেয়েছি। বিদ্যালয় খোলা থাকার পরও উপজেলা প্রশাসন আমাদের না জানিয়ে পুলিশ ও মাজার কর্তৃপক্ষকে শ্রেণিকক্ষ ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি নাগরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলে আসছে, তাই আমাদের কিছু করার নেই।’
মেলার আয়োজকদের একজন স্থানীয় পাকুটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। স্কুলে পাঠদান বন্ধ রেখে মেলা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে চলে আসছে, এবার নতুন কিছু নয়।
যোগাযোগ করা হলে ইউএনও ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের কারণে পাঠদান বন্ধ রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’