বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন তুলছেন শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন তুলছেন শিক্ষক

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শিক্ষার্থীরা তাদের বাংলা বিষয়ের শিক্ষককে চেনে না। ১০ মাসে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যে কেউ একদিন, কেউ দুই দিন তার দেখা পেয়েছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি দেখেছেন মোটে একদিন। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় কর্মদিবসের প্রতিটি ঘরে তাঁর সই। পাচ্ছেন বেতন। এ যেন কাগজে- কলমে শিক্ষক।

এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বাংলা বিষয়ের এই শিক্ষকের নাম আয়েনুর নাহার। ঘাটাইল উপজেলার মুরাইদ গারোবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এই শিক্ষকের দেখা না মিললেও অনিয়মের নানা তথ্য মিলেছে। 

সরেজমিন কথা হয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তাদের বাংলা বিষয়ের শিক্ষকের নাম। তাদের মুখে উচ্চারিত হয় এ বিষয়ের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম। আয়েনুর নাহার নামে কোনো শিক্ষককে তারা চেনে কিনা- এমন প্রশ্নে মনে হয় তারা আকাশ থেকে পড়ল। কাগজে-কলমে হামিদুলের পদবি শিক্ষক নন, অফিস সহকারী (করণিক)। কৌশলে চোখ রাখা হয় শিক্ষক হাজিরা খাতায়। সেখানে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক আয়েনুর নাহার লেখা।

এনটিআরসিএর মাধ্যমে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন গত বছরের নভেম্বরে। ওই সময় বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন লক্ষিন্দর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান একাব্বর আলী। তাঁর ভাষ্য, এমপিওভুক্ত হতে একজন শিক্ষককে অনলাইনে যে কাগজপত্র পাঠাতে হয়, সেসব কাগজপত্রে সভাপতি হিসেবে তিনি কোনো সই করেননি। কোনোদিন ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়েও দেখেননি তিনি।

আয়েনুর নাহার বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় তাঁর নামের ঘরে উপস্থিতি স্পষ্ট। বেতন শিটেও (এমপিও) তাঁর নামের ঘরে বসানো টাকার অঙ্ক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার নতুন কারিকুলামের সরকারিভাবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ উপজেলায় শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে। সেই প্রশিক্ষণেও অংশগ্রহণ করেননি আয়েনুর নাহার। অর্থাৎ বাংলা বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। বিষয়ভিত্তিক অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন কারিকুলামে প্রশিক্ষণ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে কোনো বিষয়েই পাঠদান করা সম্ভব নয়।

অফিস সহায়ক (করণিক) হামিদুল জানান, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক মূল্যায়নও করছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, বাংলার শিক্ষক নিয়োগ হলেও ওই শিক্ষক স্কুলে আসেন না। বাংলা বিষয়ের শিক্ষক আয়েনুর নাহার থাকেন ঢাকার উত্তরায়। এ বিষয়ে জানতে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে রিং বাজলেও রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

প্রধান শিক্ষক আবু ইসহাক বলেন, চলতি মাসের ৭ তারিখ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় বাংলার শিক্ষক আয়েনুর নাহারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলার শিক্ষক স্কুলে না এসেও কীভাবে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত সই করেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'একদিন এসেছিলেন ওই শিক্ষক, তাই আমরা তাঁকে একবার সুযোগ দিয়েছিলাম।'

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. শাহজাহান জানান, গত ৭ জুলাই সভা হয়েছে ঠিকই, তবে বাংলার শিক্ষককে কারণ দর্শানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হারুন-অর রশিদের ভাষ্য, তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাসখানেক আগে। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ের শিক্ষককে স্কুলে আসেতে দেখেননি।

ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, কিছু দিন আগে বিষয়টি জানতে পেরেছেন তিনি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতিকে বলা হয়েছে।

প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052359104156494