বিদ্যালয়ে নিয়োগে জালিয়াতি, শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যালয়ে নিয়োগে জালিয়াতি, শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ধাতিশ্বর আহমেদ দেলোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কয়েক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে দুই জায়গা থেকেই বেতন-ভাতা নেওয়ার। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম ওরফে ফিরোজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।

গত বছরের শেষের দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে এ বিষয়ে নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজনের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ধাতিশ্বর আহমেদ দেলোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে আগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন করে অনেকের নিয়োগ দেখানো হয়েছে। শিক্ষকদের নিয়োগের তালিকায় স্বাক্ষর একজনের এবং সিল ব্যবহার করা হয়েছে অন্যজনের। এভাবে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সাইফুল ইসলাম অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের। 

২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য তাদের ১৯টি ফাইল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠালে জেলা শিক্ষা অফিসার ফাইলে স্বাক্ষর জালিয়াতির প্রমাণ পান।

নিয়োগবঞ্চিতদের অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি একই সঙ্গে স্কুল শাখায় সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। গণিত বিষয়ে প্রভাষক পদে কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ভূলুয়াপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। রসায়ন বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম শিশুকল্যাণ কারিগরি ও উচ্চবিদ্যালয়ে এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। পরিসংখ্যান বিষয়ে আবদুল্যাহ আল হিমনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে তার স্থলে পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে আবু ইউছুফ নামের একজনের নিয়োগ দেখানো হয়। জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে আলমগীর হোসেনের স্থলে আল শরীফ নামে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইসলামি শিক্ষা বিষয়ে একই প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার ধর্মীয় শিক্ষক ওবায়দুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তার স্থলে নিয়োগ বোর্ডের পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে সহিদুল ইসলাম নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলা বিষয়ে স্বাক্ষর জাল করে তোহা নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি শাকতলী স্কুলের এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক। এভাবে আরও কয়েকজনকে নিয়োগে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিষয়ে আগে নুরুন নাহার নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তার স্থলে পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে মিলন নামে একজনকে নিয়োগ দেখানো হয়। অথচ তিনি ২০১৪ সাল থেকে বায়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। 

অফিস সহকারী পদে আবদুল কাইয়ুম নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে তার স্থলে পরীক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে জামাল হোসেন নামে অন্য একজনকে নিয়োগ দেখানো হয়। নিয়োগ বোর্ডের একজন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবু বক্কর মারা যাওয়ার পর তার স্বাক্ষর জাল করে প্রভাষক পদে আগে নিয়োগপ্রাপ্তদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

গণিত বিষয়ের প্রভাষক কামরুজ্জামান বলেন, তিনি ভূলুয়াপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার গণিত বিষয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ধাতিশ্বর আহমেদ দেলোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধাতিশ্বর আহমেদ দেলোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতি করিনি।’

এ বিষয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজটির সভাপতি মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘নিয়োগের সময় আমি সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম না।’

কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের উপপরিচালক স্যার দেখছেন। তদন্তের স্বার্থে কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমরা স্যারকে সহযোগিতা করব।’

কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুমেষ কর চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগের আলোকে স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই শেষে নিয়োগ বিষয়ে কোনো ধরনের জাল-জালিয়াতির প্রামাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064558982849121