যশোরে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন পেনশনের টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের (৬৫) স্ত্রী তোহরা খাতুন (৪৫)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালের দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির কিছু সময় পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী তোহরা খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নজরুল ইসলাম যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এমপিওভুক্ত খানপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
নজরুল ইসলাম দীর্ঘ ৩৫ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। বছর চারেক আগে অবসরে যান এই শিক্ষক। কিন্তু অবসরের পরের জীবন পতিত হয় চরম সংকটের মধ্যে।
অবসরে যাওয়ার পরে আজ পর্যন্ত এককালীন অবসর সুবিধার টাকা পাননি তিনি। এককালীন ওই টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন মানুষ গড়ার এই কারিগর। পেনশনের টাকা না পাওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ হয়ে শয্যাশায়ী অসুস্থ স্ত্রী আজ মারা গেছেন। তার এক মেয়েও অসুস্থ।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাঘারপাড়ার এমপিওভুক্ত খানপুর দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন অবসর গ্রহণ করেন শিক্ষক নজরুল। অবসরে যাওয়ার পর কল্যাণ ট্রাস্টের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেলেও আজ পর্যন্ত অবসর সুবিধার টাকা পাননি তিনি।
নজরুল ইসলাম বলেন, অর্থের অভাবে আমার অসুস্থ স্ত্রী এবং মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রতি মাসে চিকিৎসা সেবার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। বাঘারপাড়ার একটি এনজিওতে তিন হাজার টাকা বেতনে একটি চাকরি নিয়েছি। তাই দিয়ে আপাতত কোনোরকম ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের তিন সদস্যের সবাই রোগী। পেনশনের টাকার জন্য কয়েকবার ঢাকার ব্যানবেইস অফিসে অবস্থিত অবসর সুবিধা বোর্ড অফিসে গিয়েছে। সেখান থেকে আমার কাগজপত্র অস্পষ্ট বলে ফিরিয়ে দিয়েছে।
‘আমার ছাত্র অনেকে দেশ-বিদেশে চাকরি করছে। কেউ আজ পর্যন্ত আমার খোঁজখবর নেয়নি। সম্প্রতি আমি ফেসবুকে লাইভে এসে কথা বললে অনেকে যোগাযোগ করেছে, সহোযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেউ এখনো সহযোগিতা করেনি। আজ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেলো’- আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন নজরুল ইসলাম।