দেশের সবশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনার জন্য প্রায় চার লাখ ট্যাব কেনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কার্যক্রম শেষে এসব ট্যাব অলস বসিয়ে না রেখে অর্ধেকের কিছু বেশি ট্যাব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাকি ট্যাব রাখা হবে সামনের অর্থনৈতিক শুমারিসহ বিভিন্ন জরিপের কাজে। আপাতত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সমমানের সরকারি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এসব ট্যাব পাচ্ছে।
ট্যাব বিতরণের গাইডলাইন অনুসরণ করে ধাপে ধাপে দুই লাখ ৮৮৫ মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ট্যাব। এরই মধ্যে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭১৪টি ট্যাব বিতরণ শেষ। বাকি ৬২ হাজার ১৭১টি ট্যাব বিতরণের কাজ চলমান জানায় বিবিএস।
বিবিএসের তথ্যমতে, শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি ট্যাব বিতরণের টার্গেট গাজীপুরে ৯ হাজার ৫৮১টি। এরই মধ্যে তিন হাজার ৮৪২টি বিতরণ হয়ে গেছে, বাকি রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৩৯টি।
যেসব শিক্ষার্থী পাচ্ছে ট্যাব
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সমমানের সরকারি মাদরাসার তালিকা প্রস্তুত এখনো চলমান। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বলতে শুধু সরকারি ও এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা বলতে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমমানের সরকারি মাদরাসা বোঝাবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যারা সমন্বিত মেধাতালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তাদের নির্বাচন করা হয়েছে ট্যাব বিতরণের জন্য। উপজেলা কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ করা মাধ্যমিক বিদ্যালয়/সমমানের সরকারি মাদরাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকা জেলা কমিটির অনুমোদনের পর চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
ট্যাব বিতরণ পদ্ধতি
চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়/সমমানের সরকারি মাদরাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে ট্যাব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা এসব ট্যাব তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য অফেরৎযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিবিএস জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পের মাধ্যমে কেনা ট্যাবগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নিজস্ব প্রয়োজনের অতিরিক্ত ট্যাব দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়/সমমানের সরকারি মাদরাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে। এ উদ্যোগ তরুণ সমাজকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সময় ও যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী, নির্ভুল পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও সরকারঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অবদান রাখার অভিপ্রায়ে ১৫ থেকে ২১ জুন ২০২২ সময়সীমায় প্রথম ‘ডিজিটাল শুমারি’ পরিচালনা করে। ডিজিটাল শুমারি তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনা হয়। ভবিষ্যতে বিভিন্ন শুমারি ও জরিপ কার্যক্রমে ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্যাবলেট সংরক্ষণ করবে বিবিএস।
এসব ট্যাব কেনায় খরচ হয় ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা। ট্যাবে আছে ৩২ গিগাবাইট র্যাম। শিক্ষার্থীরা এই ট্যাব দিয়ে টাইপিং, ডকুমেন্টেশন, প্রেজেন্টেশন বানাতে পারবে, যা তাদের শিক্ষার পরিবেশ আরও সহায়ক করে তুলবে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘আমরা ট্যাবগুলো মেধাবীদের হাতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকারকে এ উদ্যোগ সহায়তা করছে। কারণ ট্যাবগুলো তরুণ মেধাবীদের হাতে যাচ্ছে। তারা তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে পারছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারেও তারা পারদর্শিতা অর্জন করছে। যে উদ্দেশ্যে ট্যাবগুলো কিনেছি সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল। ট্যাবগুলোর মানও ভালো।’
বাকি ট্যাবগুলো কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাকি ট্যাবগুলো আমরা বিভিন্ন জরিপে ব্যবহার করবো। যেমন সামনে অর্থনৈতিক শুমারি হবে এখানে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি ট্যাব লাগবে। এছাড়া বিবিএসের নানা জরিপে ট্যাবগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।’