উচ্চশিক্ষার মানোন্ননে সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোনো কোর্স কারিকুলামের বদলে আউটকাম বেইজড এডুকেশন ক্যারিকুলাম অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ইউজিসি অডিটরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগের ফলে বিগত বছরগুলোতে দেশের শিক্ষাখাতে সংখ্যাগত দিক দিয়ে প্রসার ঘটেছে। দেশের বিশাল সংখ্যক তরুণ সমাজকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে সংখ্যাগত প্রসারের এ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিবহার্য ছিলো। কিন্তু, শিক্ষার মানোন্নয়নকেই এখন সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্ভাবন ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া কোলাবেরশন বৃদ্ধিসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ওপর জোর দেন। অন্যথায়, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক শ্রমবাজারের উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তিনি পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোনো কোর্স কারিকুলাম বদলে আউটকাম বেইজড এডুকেশন ক্যারিকুলাম অনুসরণের আহ্বান জানান।
ডা. দীপু মনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রম উৎসাহিত করতে গবেষণাখাতে বাজেট বরাদ্দ দিগুন করা হয়েছে। শিক্ষাখাতের সার্বিক বাজেটও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি শিক্ষার বাজেট বৃদ্ধির চেয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. অনুপম সেন আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের সময় অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে একাডেমিক লক্ষ্য সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানান। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তিনি ইউজিসিকে আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি ইউজিসিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী গ্ৰ্যাজুয়েট ও কোর্স অনুমোদনের পরামর্শ দেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শ্রমবাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান। দেশে বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কমিশনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণে অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা এবং ফাইনান্সিয়াল ম্যানুয়াল প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এ নীতিমালা কার্যকর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইউজিসির কাঠামো, আইনি ও জনবল আজকের ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইউজিসির সক্ষমতা, দক্ষতা এবং আইনি ক্ষমতা দেয়া এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ একান্ত প্রয়োজন।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। ইউজিসির বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।