অন্তবর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এটি। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ এবং একজন প্রার্থী সর্বাধিক তিনবার বিসিএসে অবতীর্ণ হতে পারবেন। আগের যুগে ৩০ বছরে ৬ টা বিসিএসে অংশগ্রহণ করা যেতো। ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলনে একটি চমৎকার প্রাপ্তি হলো। ৩৫ বছর চেয়ে ৩২ জুটেছে। একটার পর একটা বিসিএস অংশগ্রহণ করার দৌড় থেমেছে।
বিসিএসে তিনবার অংশগ্রহণ একজন ক্যান্ডিডেটের জন্য ম্যাচিউরড টাইম। তিনবারে ব্যর্থ হলে তারা অন্য চেষ্টা করুক। তিনবারে ভাগ্য এবং যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য মোটেও অনুপযুক্ত সময় নয়। বরং ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সেবা রাষ্ট্রকে দেয়ার সক্ষমতা, শুধু ক্যাডার হবো এমন মানসিকতা- এই আশায় বেকার বসে থাকা, সামাজিক জটিলতা তৈরি না করাসহ অনেকগুলো উপকার সূচিত হলো। যারা আন্দোলনে নেমেছিলেন তাদেরকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত সন্তুষ্ট করতে পারবে না বটে তবে বৃহত্তর অংশের উপকার হলো।
গড়ায়ুর অর্ধেক সময় কেবল ক্যাডার প্রাপ্তির আশায় সংসার এবং পরিবারের সদস্যদেরকে বঞ্চিত করে, জিডিপিতে কোনো অবদান না রেখে কেবল এমপিথ্রি নিয়ে দৌড়াদৌড়ির দৌরাত্ম্য এবার কিঞ্চিৎ হলেও কমবে। পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে কত গুরুত্বপূর্ণ বই থাকার পরেও সেখানে বসে গাইড পড়ার চিত্র- জ্ঞান চর্চার দারিদ্র্যতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতো। এবারের সিদ্ধান্তে গাইড বইয়ের বাজার এবং কোচিং ব্যবসায়ীদের মার্কেট হাইপ ব্যালেন্সড হবে। ৩৫ না করার অনেক যুক্তি ছিলো। সরকার সেটা আমলে নেয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে- এজন্য সাধুবাদ তারা পেতেই পারে।
যারা ইতোপূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতি পোষানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রের নাই। বরং প্রার্থীদের আলস্যকে দায়ী করা যায়। ভাগ্যও সবার সহায় হয় না। তবে রাষ্ট্র ভবিষ্যতে কারো ক্ষতি হওয়ার যে পথটি আজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। মধ্যবয়সে চাকরি শুরু করে একজন শিক্ষক কিংবা প্রফেশনাল কর্মকর্তা রাষ্ট্রকে কিছু দিতে পারলেও পররাষ্ট্র, পুলিশ এবং প্রশাসনসহ আরো কয়েকটি ক্যাডারের সদস্যদের দেয়ার মত পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকে না। বয়স সর্বদাই ভিলেন! কেনোনা তাদেরকে পেশাগত দক্ষ করে তোলার জন্য রাষ্ট্রকে বহুবছর বিভিন্নধরনের ট্রেনিং দেয়াতে হয়।
চাকরিতে প্রবেশের সীমা ৩২ বছর এবং নির্দিষ্ট পেশায় প্রবেশে সর্বোচ্চ তিনবার অংশগ্রহণের সুযোগের সিদ্ধান্তের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতা এবং বাস্তবতা আছে। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে, কমিশনের সুপারিশ আমলে না নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এমন এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে যা সর্বাধিক সংখ্যকদের জন্য যৌক্তিক। রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে আরো সচেতন হতে হবে কেনোনা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন যে সুপারিশ করে, তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই পাবলিক করা ঠিক নয়। এতে বিপত্তি বাড়তে পারে।
লেখক: প্রাবন্ধিক
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)