বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার এক যুগ ও প্রতিষ্ঠানের বয়স শত বছর পার হলেও এখনো উন্নত হয়নি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ল্যাব। টেক্সটাইল প্রকৌশল নিয়ে বিশেষায়িত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলো ঘুরে দেখা যায় নানা সমস্যা। বেশিরভাগ মেশিন ব্রিটিশ আমলের পুরোনো। মডার্ন মেশিন থাকলেও সংখ্যায় খুবই কম। আবার যেসব মেশিন রয়েছে, তাও চালিয়ে দেখানো হয় না শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান চারটি ল্যাবে যেসব মেশিন রয়েছে তার কার্যকারিতা যাচাই করে কিছু মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনোটি পুরোপুরি নষ্ট, কোনোটির মেশিন পার্টসে সমস্যা, আবার কোনোটির পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা। ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কটন স্পিনিং ল্যাবে ২৮টি মেশিনের অবস্থা যাচাই করে দেখা যায় সাতটি নষ্ট।
ল্যাবে বিদ্যমান সমস্যা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল জাবের রাফি বলেন, ল্যাবে যদি মেশিনের অপারেশন দেখা না যায় তাহলে ল্যাব আর থিওরি ক্লাসের মধ্যে তফাত থাকে না। কিছু মেশিন অচল অবস্থায় আছে। শোনা যায় এতে পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা।
শুধু পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য যদি ল্যাবের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কেন এর সমাধান করা হচ্ছে না! নিটিং ল্যাব নিয়ে বলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, নিটিং ল্যাবের মেশিনের সংখ্যা যথেষ্ট। নিটিং ভালোভাবে শেখার জন্য যেসব মেশিন প্রয়োজন প্রায় সবই আছে। কিন্তু নিটিং কোর্স অন্যান্য কোর্সের তুলনায় কঠিন। মেশিনগুলো চালিয়ে দেখানো হলে বুঝতে আরও সুবিধা হতো। কিন্তু সেটি না করানোয় মেশিনের কার্যপ্রক্রিয়া আয়ত্ত করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এত পুরোনো মেশিন আছে, যা ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, মডার্ন মেশিন শেখার আগে পুরোনো মেশিন শেখা লাগে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরিতে গিয়ে মডার্ন মেশিনের কার্যকারিতা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সঙ্গে ততটা মিল পাওয়া যায় না। মডার্ন যুগে ল্যাবে পুরোনো মেশিনগুলো নিয়ে একটি টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল মেশিনের কোন অংশ থেকে কোন অংশে অবতরণ করে তা বলা হয়। মেশিন কোনোটা নষ্ট আবার কোনোটা সচল থাকলেও চালিয়ে দেখানো হয় না। ৪৪তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন ভিন্ন কথা।inside-ad]
তিনি বলেন, সব মেশিন যে চালিয়ে দেখতে হবে এমনও নয়। ল্যাবে মেশিনের মেকানিজম দেখতে হয়। তা মেশিন না চালিয়েও শেখা যায়। এতে মেশিনের শেখানোর উদ্দেশ্য সফল হয়। আবার সব মেশিন চালু রাখাও সম্ভব না। ল্যাবে জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। সময় ও আগ্রহের কারণে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের শেখা হয়ে ওঠে না।
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বাশার উদ্দিন বলেন, সচল মেশিনগুলো চালিয়ে দেখানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ইয়ার্ন ল্যাবের মেশিনগুলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা বড় আকারে হওয়ায় ১০০ মিনিটের ল্যাবে শিক্ষার্থীরা মেশিনের বিস্তারিত শেখানোর পর সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় তা চালিয়ে দেখানো সম্ভব হয়ে ওঠে না, ম্যাটেরিয়ালসহ প্রসেস দেখানো তো আরও সম্ভব হয় না।
একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ছাত্রাবস্থায় ল্যাব ছিল ৩ ঘণ্টার। এখন ল্যাব হচ্ছে ২ ঘণ্টায়। শিক্ষার্থীও বেড়েছে, এই কম সময়ে ল্যাবে শিক্ষকরা ক্লাস নেবে, ভাইভা নেবে নাকি মেশিন চালিয়ে দেখাবে! তবে ল্যাবের সময় বাড়ানো উচিত।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এ টি এম ফয়েজ আহমেদ বলেন, মেশিন নষ্ট আছে, তা ঠিক করানোর জন্য বাজেট প্রয়োজন হয়। এবার প্রজেক্টাইল লোম মেশিন চেষ্টা করছি ঠিক করার। মডার্ন মেশিনগুলো চালিয়ে দেখার মতো অবস্থায় রাখা প্রয়োজন। আবার কিছু মেশিন আছে যা মডার্ন মেশিনের মেকানিজম বুঝার জন্য আগে জানা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করছে ইউজিসি থেকে বাজেট বাড়িয়ে আনার। বাজেট পেলে মেশিনগুলো ঠিক করা হবে।