রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফকির আবদুল কাদেরের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের ২৫ শিক্ষক-কর্মচারী জুলাই থেকে পাঁচ মাস বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। বেতন ছাড় করতে তিনি এক মাসের সমপরিমাণ প্রায় ৬ লাখ টাকা দাবি করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে। আর ঘুষ দাবির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে গত ২০ নভেম্বর গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপেক্ষিতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ৬ জুলাই পদত্যাগ করেন। এর ফলে ওই বিদ্যালয়ের সাধারণ ও ভোকেশনাল শাখার ২৫ শিক্ষক-কর্মচারী চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষকরা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন সভাপতির পদত্যাগপত্রটি শিক্ষা বোর্ডে গৃহীত হয়নি। কাজেই আগের কমিটিই বহাল রয়েছে। এ অবস্থায় তারা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে বেতন-ভাতার বিলে স্বাক্ষর করার অনুরোধ করলে তিনি সভা ডেকে সব শিক্ষক-কর্মচারীর কাছে এক মাসের বেতনের টাকা (প্রায় ৬ লাখ টাকা) দাবি করেন। এরপর তিনি বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন বলে প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে তারা অস্বীকৃতি জানালে প্রধান শিক্ষক বেতন-ভাতার বিলে স্বাক্ষর না করে টালবাহানা শুরু করেন।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে বারবার অনুরোধ ও পরে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি বেতন-ভাতার বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, গালাগাল, গায়ে হাত তোলা, নিয়োগ-বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের টাকা নয়ছয় করা, তার আচরণে সভাপতির পদত্যাগ করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ তোলেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার সাহা বলেন, তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসকের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ খেতে পারছেন না। সংসারের অন্যান্য মৌলিক চাহিদাও মেটাতে পারছেন না। বাজারের দোকানদাররা আর বাকি দিতে চাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘যেনতেন কারণে প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও গালাগাল করেন। গায়ে হাত তোলেন।’
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদেরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাটসহ সারা দেশে এত দুর্নীতি হয় সেগুলো চোখে দেখেন না? শুধু আমারটাই দেখলেন! এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিলে তদন্ত করে গত ৩ ডিসেম্বর রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রধান শিক্ষকের ছয় লাখ টাকা দাবির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রিপোর্টটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।