দৈনিক শিক্ষাডটকম, বেরোবি: সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফার পদোন্নতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার (২ জুন) এই সংক্রান্ত একটি পত্র সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।
এর আগে দুদকের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গত ২৩ মে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবরে দ্বিতীয় দফায় পত্র প্রেরণ করেছে।
ইউজিসির উপ-পরিচালক গোলাম দস্তগীর স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, খন্দকার গোলাম মোস্তফার উত্থাপিত অভিযোগের দালিলিক প্রমাণসহ দফাওয়ারী লিখিত বক্তব্য ইতিপূর্বে চাওয়া হয়। কিন্তু অদ্যবধি কোনো তথ্যাদি প্রদান করা হয়নি। ফলে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য-উপাত্তসহ দফাওয়ারী লিখিত বক্তব্য প্রেরণের জন্য বলা হয়।
এদিকে, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা খন্দকার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতিসহ কিছু বিষয়ে রেজিস্ট্রার বরাবরে অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পূর্বে খন্দকার গোলাম মোস্তফা যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির ধারাবাহিকতা নেই বরং ব্রেক অব সার্ভিস রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির সময় তিনি ঘঁষামাজা ও ওভার রাইটিং করে অভিজ্ঞতা সনদ নকল করে চাকরির ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন।
এরমধ্যে কুড়িগ্রামে “দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়া ও বিলে মৎস চাষ এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে” চাকরি করেছেন ১৯ আগস্ট ২০০২ থেকে ৩০ জুন ২০০৮ পর্যন্ত। কিন্তু ঘঁষামাজা ও ওভার রাইটিং করে অভিজ্ঞতা সনদ নকল করে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে মেয়াদ দেখিয়েছেন ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত। কারণ, এই চাকরির পরের চাকরি ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখ হতে শুরু। এই ব্রেক অফ সার্ভিসকে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে অন সার্ভিস দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, খন্দকার গোলাম মোস্তফা ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে অ্যাডহক (৬ মাস) ভিত্তিতে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদন করে তিনি ওই পদে ১৫ মে ২০১৪ তারিখে নিয়োগ পান। এক বছর অপেক্ষাধীন থাকার পর ২০১৫ সালে তার চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়।
২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর যোগদানের এক মাসের মাথায় ১৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদ (৬ষ্ঠ গ্রেড) হতে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে উপ-রেজিস্ট্রার পদে (৫ম গ্রেড) পদোন্নতি পান।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, একই তারিখে মোট ২০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পান। তাদের সকলের পদোন্নতির নিয়োগপত্র একই ধরণের ছিল। এরই মধ্যে তিনি একাডেমিক শাখা থেকে বদলি নিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের অধীনে সংস্থাপন শাখায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, উপ-রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতির মাত্র দুই বছরের মাথায় তার অভিজ্ঞতা ও নিয়োগপত্র জাল করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে (৪র্থ গ্রেড) পদোন্নতি নেন।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করেছি। সেই অনুযায়ী আমাকে অভিজ্ঞতার সনদ দেওয়া হয়েছে। বোর্ড তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমার নিয়োগ হয়েছে। এখানে আমি জালিয়াতির কিছু দেখি না।
এদিকে, খন্দকার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতিসহ কিছু অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোঃ শরীফুল ইসলামকে আহবায়ক করে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কমিটির পরে গত ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মজিব উদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলীকে সদস্য ও কাউন্সিলর শাখার উপ-রেজিস্টার ময়নুল আজাদকে সদস্য সচিব করে আরেকটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহবায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মজিব উদ্দিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।