দৈনিক শিক্ষাডটকম, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): জন্মগতভাবে দৃষ্টিহীন। এরপরও থেমে থাকেনি সে। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছে চা বাগানের এই কিশোরী। বড় বোনের মুখে শুনে শুনে নিয়েছিল এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি। শ্রুতি লেখক নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসিও পাস করেছে সে।
উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগান এলাকার দোলোয়ার মিয়া ও রিমা আক্তার দম্পতির মেয়ে লিমা বেগম (১৬)। বড় বোনও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। দরিদ্র পরিবারে বেড়া ওঠা তাদের।
গতকাল রোববার প্রকাশ হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৮ পেয়ে পাস করেছে লিমা। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার তাহের শামছুননাহার উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর পরীক্ষা দিয়েছিল সে।
একদিকে দৃষ্টিহীনতা, অপরদিকে অভাব অনটনের মধ্যে থাকলেও থেমে থাকেনি লিমা। শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছে পাস করেছে সে। তার এখন ইচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।
শ্রুতি লেখক একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নন্দিনীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিমা বলে, ‘সে (নন্দিনী) রাজি না হলে আমি পরীক্ষা দিতে পারতাম না। পরীক্ষার কয়েক দিন আগে সে রাজি হওয়ার কারণেই আমি পরীক্ষা দিতে পেরেছি এবং পাস করেছি।’
লিমা জানায়, ‘আমি পুরো পড়াশোনা করেছি শুনে শুনে। সে কাজে বড়বোন সহায়তা করেছে। পরীক্ষায় আমার কথা শুনে আরেক জনকে লিখতে হয়েছে।’ স্বাভাবিকদের তুলনায় কিছুটা গতি হারালেও সফল হয়েছে সে।
লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে লিমা বলে, ‘এসএসসি পাস করেছি। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে চাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরেশ জানান, ‘দৃষ্টিহীন লিমার আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ফরম পূরণের সময় আমাদের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব আর্থিক সহায়তা দিয়ে ফরম পূরণ করে দিয়েছেন। তার এক বড় বোন এবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব লিমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘অন্ধত্ব আর দারিদ্র্যতা তাকে আটকাতে পারেনি। ইচ্ছা থাকলে যে সবকিছু করা সম্ভব তার প্রমাণ লিমা। চা বাগানের ছেলে–মেয়েদের মধ্যে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সবার সহযোগিতা পেলে সে আরও এগিয়ে যাবে।’