জেলা জজসহ দুই বিচারক ও নাজিরের অপসারণ চেয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো জেলার সব আদালত বর্জন করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা। রোববার (৮ জানুয়ারি) বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচারপ্রার্থী।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদালত বর্জন কর্মসূচি শুরু করে জেলা আইনজীবী সমিতি। এর আগে গত বুধবার সকালে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগ এনে কর্মবিরতি পালন করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।
সব মিলিয়ে টানা তিন দিন এখানকার বিচারাঙ্গনে অচলাবস্থা চলছে। গতকালও সমিতি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা। সেখানে দাঁড়িয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানবীর ভূঁঞা বলেন, ‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের দুর্নীতিবাজ নাজির মোমিনুল ইসলাম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর কারণ, আদালত প্রাঙ্গণ জাল স্ট্যাম্প ও জাল কোর্ট ফি বিক্রির মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে কোটি টাকা হাতানোর সঙ্গে জড়িত নাজির মমিনুল ইসলাম চৌধুরী। এই অবৈধ কার্যক্রমের বিরোধিতা করায় বিচারকরা আইনজীবীদের ওপর নাখোশ হন। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে দুই বিচারকের অপসারণ দাবি করছি। অপসারণ না করা পর্যন্ত আদালত বর্জন কর্মসূচি চলবে।’
টানা তিন দিন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জামিন শুনানির জন্য নাসিরনগরের দাঁতম-ল গ্রাম থেকে আসা সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমার ছোট ভাই পাভেল মিয়াকে নারী নির্যাতনের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলায় ফাঁসানো হয়। মামলায় আমার ভাইয়ের জামিন শুনানি হওয়ার কথা। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। কবে আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে এর নিশ্চয়তা না থাকায় দুশ্চিন্তায় পরিবার।’
সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রাম থেকে আসা আলাল মিয়া বলেন, ‘মেয়েকে তার স্বামী হত্যা করেছে। তিন দিন ধরে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা নিয়ে এগোতে পারছি না।’ ছোট নাতিকে কোলে নিয়ে আদালতে এসেছিলেন আলাল মিয়া। তিনি আরও বলেন, ‘মামলার কাজ শুরু করতে না করতেই আটকে গিয়েছি। জানি না মামলা কতটুকু এগিয়ে নিতে পারব।’
তবে অনেক আইনজীবী তাদের মোয়াক্কেলদের আগেভাগে জানিয়ে দিয়েছেন আদালতে তারা যাবেন না। অসীম কুমার বর্দ্ধন নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘আমি আমার কাছে আসা পক্ষগুলোকে জানিয়ে দিয়েছি যে আদালতে সমস্যা হচ্ছে, এখন কাজ হবে না।’