বেসরকারি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নতুন নামকরণের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তাতে সম্মতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদের নাম অনুসারে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ ইউনিভার্সিটি’ এবং সংক্ষেপে ‘আবেদ ইউনিভার্সিটি’। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইউজিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্যার ফজলে হাসান আবেদ বেঁচে থাকতেই ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) ৩১তম সভায় প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। বিওটির ওই সিদ্ধান্তের তিন বছরের বেশি সময় পর চলতি বছরের মে মাসে নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডাউল্যান্ড ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠান। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তার নামে করতে চায় বিওটি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ইউজিসির মতামত চাওয়া হয়।
বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন। তারা জানান, দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সুপরিচিত একটি নাম। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। বিশেষত যারা বিদেশে পড়তে যাবেন নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে তাদের। তাই দেশের জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদের অবদান স্মরণ করে শিক্ষার্থীরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন না করে তার নামে পৃথক কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইনস্টিটিউট করার পরামর্শ দেন।
এদিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়ার পর ইউজিসি আবেদনটি তাদের আইন সেলে পাঠায়। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-২০১০-এ শিক্ষামূলক কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা না থাকায় ইউজিসি এ বিষয়ে সম্মতি দেয়নি। তাছাড়া নাম পরিবর্তন করলে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে এরই মধ্যে স্নাতক সম্পন্নকারীদের সনদসহ আরো বেশকিছু বিষয় নিয়ে জটিলতার শঙ্কা রয়েছে বলে মত দেয় কমিশন।
এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু বলা নেই। আবার নাম পরিবর্তন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে এরই মধ্যে যারা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন, তাদেরও একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে। এর বাইরে আরো কিছু জটিলতাও হতে পারে। এসব কারণেই কমিশনে নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচিত হয়নি।’ কমিশনের সেই মতামত শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান ইউজিসির এ পরিচালক।