একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবারও ভূইফোঁড় কলেজের প্রশ্ন সামনে এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশের ২০৪টি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবার একাদশ ও আলিম শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদন করলেও তারা ভর্তির ‘নিশ্চায়ন’ করেনি। এর মধ্যে চারটি কলেজে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি।
এছাড়া প্রায় পাঁচশ’ কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে ‘আকর্ষণ’ হারানো এসব কলেজ টিকে থাকতে নানা কসরত করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, ‘ ২০০টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির নিশ্চায়ন করেনি। এর সবকটি কলেজই বোর্ডের অনুমোদিত। আরও অসংখ্য কলেজ ও মাদরাসায় একজন-দু’জন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর একাদশ শ্রেণি ও সমস্তরে অনলাইনে প্রথম পর্যায়ের ভর্তির আবেদনের শেষ সময় ছিল। ওই সময়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে মোট ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এ হিসাবে এবার এমনিতেই কম উত্তীর্ণ হয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী।
২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির প্রথম পর্যায়ে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। এবার সারাদেশের কলেজ ও আলিম মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে মোট ভর্তিযোগ্য আসনের সংখ্যা ২৫ লাখ ৫৪ হাজারের মতো।
সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমস্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এর মধ্যে দুইশ’ প্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করলেও তারা ভর্তির নিশ্চায়ন করেনি।
আজ দ্বিতীয় পর্যায়ের ভর্তির আবেদনের ফল প্রকাশ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন করে দুই লাখ ৮২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপরও গত বছর এসএসসি ও সমস্তরে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত ভর্তির আবেদন করেনি।
বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের আবেদন ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নেয়া হয়। এ ধাপের ফল ১২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হচ্ছে। নিশ্চয়ন চলবে ১৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি।
এরপর তৃতীয় ধাপের আবেদন ১৬ জানুয়ারি ও ফল প্রকাশ ১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধাপের নিশ্চায়ন করা যাবে ১৯ থেকে ২০ জানয়ারি পর্যন্ত। যারা ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে তাদের ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি হতে হবে। ক্লাস শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি।
যেসব কলেজ ও আলিম মাদ্রাসায় কোন শিক্ষার্থী ভর্তির নিশ্চায়ন করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের অস্থিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।
ওইসব কলেজ ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘একাদশ শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমোদন পেতে প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ৫০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হয়। কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে পাঠদানের অনুমতি বাতিল হতে পারে।’ ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগে পাঠদান হয়। এরমধ্যে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় আবশ্যিক। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে অন্তত তিনটি আবশ্যিক বিষয় নিতে হয়।
এ হিসাবে প্রতি বিষয়ে ন্যূনতম একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও অধ্যক্ষসহ একটি কলেজে ১২ জন শিক্ষক থাকে। এছাড়া কর্মচারী, লাইব্রেরিয়ান, পিয়নসহ সব মিলিয়ে অন্তত ২০ জন জনবল থাকে। যেসব কলেজে কেউ ভর্তি হতে আবেদনই করেনি সেগুলো কীভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা দেবে, টিকে থাকার ব্যয় নির্বাহ করবে সেটি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
গত বছর শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই এক ডজনের মতো কলেজ কোন শিক্ষার্থী পায়নি। আরও অর্ধশত কলেজে ন্যূনতম দুইজন থেকে পঞ্চাশ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল।
সাধারণত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভরশীল। তবে এমপিওভুক্ত কলেজগুলো সরকার থেকে বেতন-ভাতা পায়।