ভাঙা সেতুতে শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ - দৈনিকশিক্ষা

ভাঙা সেতুতে শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

আমাদের বার্তা, সাতক্ষীরা |

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত বাঁকড়া সেতু ভেঙে পড়েছিল ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই। এরপর দুই বছর পার হলেও সেতুটি এখনো মেরামত হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষজন। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির মাঝ বরাবর দেবে মরিচ্চাপ নদীর পানিতে ছুঁয়েছে। সেতুটির পাশে পলেস্তারা খসে পড়েছে, রডে ধরেছে মরিচা। এই সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সাইকেল পার করতে হচ্ছে মজুরি দিয়ে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। কিন্তু মাঝখানের বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় এখন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ভারী যানবাহন যাতায়াত করতে হচ্ছে ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কথা ছিলো সেতুর নিচ দিয়ে নদীর জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হবে। কিন্তু এখন দেখছি সেতুর উপর দিয়ে জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। পুরুষ মানুষ কাছা মেরে কোন রকমে সেতু পার হলেও নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়ছেন বিপাকে। এলাকার শতশত শিক্ষার্থী সেতু পার হচ্ছেন ঝুঁকি নিয়ে।
স্থানীয় স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নদীর অপর পাড়ের গ্রাম থেকে বাইসাইকেলে স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, আমরা বাইসাইকেলে স্কুলে যাতায়াত করি। কিন্তু সেতুর উপর পানি থাকায় বাইসাইকেল পারাপার করতে পারি না। বাইসাইকেল পারাপারের জন্য প্রতিবার ১০ টাকা করে দিতে হয়। সামনে আমাদের পরীক্ষা। ভাঙা সেতুর কারণে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুব কষ্ট হয়।

কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক রঘুনাথ কুমার বিশ্বাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেতু পারাপার হন। সেতুটি সংস্কার কিংবা নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। নাকানি-চুবানি খেয়ে এভাবে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। দ্রুত সেতুটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, তাঁদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসেন বাঁকড়ার অপর পাশ থেকে। প্রতিদিন কয়েক শ' ছেলে-মেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। সেতুটি সংস্কার না হওয়ার কারণে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপজেলা প্রকৌশলী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বলছেন, সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। ভেঙে যাওয়া সেতুটি সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ এলজিইডি করবে। 

অন্যদিকে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া সড়কটি এলজিইডির। কিন্তু সেতুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নির্মাণ করেছিল। সেতুটির ব্যাপারে ওই মন্ত্রণালয়কেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত এই সেতুটি নির্মাণ করে। মরিচ্চাপ নদী খননের পর নদের প্রস্থ বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি দেবে যায়।

আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন দুই পাশে কাঁচা সড়ক ছিল। নদটিও ভরাট হয়ে ছোট হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই সড়কটি এলজিইডি পাকা করার পাশাপাশি তাদের তালিকাভুক্ত করে নিয়েছে। ফলে ওই সড়কের ভেঙে পড়া সেতুতে তারা কাজ করতে পারেন না।
আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৫৪ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। পাকা করার অনেক আগে থেকেই এটি এলজিইডির সড়ক। তখন যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ করেছিল, তাদেরই সেতুটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করার কথা। এরপরও জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা নিয়ে এ ব্যাপারে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী। কিন্তু তারপর কোনো নির্দেশনা আসেনি।

জানা যায়, সেতু নির্মাণের আগে মরিচ্চাপ নদী আশাশুনির বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছিল। ডিঙিনৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। কোনো খেয়ানৌকা কিংবা ঘাট না থাকায় প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতেন তারা। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবির মুখে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুড়িয়া ও শোভনালী ইউনিয়নের উত্তরে বাঁকড়াকে সংযুক্ত করে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। হঠাৎ করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই সেতুটি মাঝ বরাবর ভেঙে যায়।

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013408899307251