ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সময় ওই ট্রেনেই ছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা এলাকার মো. আক্তারুজ্জামান। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে ভেলরে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। পরে মুঠোফোনে স্বজনদের জানান তারা অক্ষত আছেন।
দুর্ঘটনা সম্পর্কে মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, তারা শুধু বুঝতে পেরেছিলেন বিকট শব্দ হলো। সেইসঙ্গে ট্রেনটি সজোরে ঝাঁকুনি দিলো। সামনে কিছু একটা হয়েছে বোঝার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ব্যর্থ হলেন। এক সময় তাদের সরিয়ে দেওয়া হলো। শুধু যাওয়ার সময় চোখের সামনে দেখতে পেলেন হতাহতদের নিয়ে টানাটানি। আহতরা চিৎকার করছে, তাদের উদ্ধারে কাজ করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয়রা।
মহেশপুর উপজেলার সামন্তা এলাকার পাখরাইল গ্রামের বাসিন্দা মো. আক্তারুজ্জামান। স্ত্রী নূর জাহানের চিকিৎসার জন্য করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভেলর যাচ্ছিলেন। আক্তারুজ্জামান মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। শনিবার (৩ জুন) সকাল ৭টায় তাদের আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা এখন ভেলরের পথে।
মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীর। তিনি জানান, স্ত্রী নুর জাহানের চোখের সমস্যা। বেশ কয়েক দফা ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন। এবার সিদ্ধান্ত নেন ভেলর গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। সেই ইচ্ছায় গত ১ জুন ভারত যান। এরপর ট্রেনের টিকিট নিয়ে শুক্রবার দুপুরে শালিমার স্টেশনে হাজির হন। ৩টা ২০ মিনিটে তাদের বহনকারী করমন্ডল ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা যখন উড়িষ্যার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় পৌঁছান তখন ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তারা বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেন। তারাও বুঝে নেন ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।
আক্তারুজ্জামান জানান, তারা ছিলেন ২-এ এসি বগিতে। তাদের সামনে ছিল আরও কয়েকটি বগি। তারা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে সামনে কী ঘটেছে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় মানুষ তাদের বাধা দেন। তারা উদ্ধারকাজ শুরু করেন, আর যারা অক্ষত আছেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ট্রেন থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর তারা বাসযোগে কিছুটা দূরে এক এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পরদিন সকালে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন ভেলরের পথে। ঘটনাস্থল থেকে বাসে ওঠা পর্যন্ত সময়টুকু তাদের আতঙ্কে কেটেছে। কী হচ্ছে সামনে, তা তারা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। অনেক বাংলাদেশি ছিল এই ট্রেনে তারা কেমন আছেন সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু তারা ভালো আছেন এই খবরটা স্বজনদের কাছে মুঠোফোনে জানিয়ে দিচ্ছিলেন।
এভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর ট্রেনের কর্মকর্তারা এসে তাদের সরিয়ে দেন। গোটা রাত তারা থেকেছেন পাশের একটি শহরে। শনিবার সকালে মাইকে তাদের ভুবনেশ্বর স্টেশনে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। তারা সেখানে গেলে পন্ডিশ্রী নামের আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়।
আক্তারুজ্জামান জানান, ঘটনার পর কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তবে যখন তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল তখন দেখতে পান হতাহতদের নিয়ে ছুটাছুটি, যা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। আহত মানুষের চিৎকার কষ্ট দিয়েছে। শুধু ভেবেছেন এত বড় এক দুর্ঘটনায় পড়েও তারা ভালো আছেন।