দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ভারতে এক দশকে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। উচ্চশিক্ষিত যুবাদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। সে তুলনায় কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যুবাদের মধ্যে কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্নাতকদের জন্য বেকারের হার ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ যারা পড়তে বা লিখতে পারেন না তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে অশিক্ষিতদের তুলনায় স্নাতকদের বেকারত্বের হার প্রায় নয় গুণ। এ ছাড়া মাধ্যমিক পাস বা উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অশিক্ষিতদের তুলনায় ছয় গুণ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর নতুন এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
ভারতের শ্রমবাজারের ওপর আইএলওর নতুন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে প্রধানত যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের বা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে এই সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
এই পরিসংখ্যানগুলো ভারতের শ্রমশক্তির দক্ষতা এবং বাজারে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের মধ্যে বড় অসামঞ্জস্যকেই নির্দেশ করে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজনের মতো সুপরিচিত অর্থনীতিবিদেরা বেশ কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। ভারতের দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা যে এ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ব্যাহত করছে, এই পরিসংখ্যান সেটিই তুলে ধরেছে।
আইএলও বলেছে, ভারতে যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন বৈশ্বিক স্তরের চেয়ে বেশি। ভারতীয় অর্থনীতি নতুন শিক্ষিত যুব শ্রমশক্তির জন্য অ–কৃষি খাতে যথেষ্ট আকর্ষণীয় কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এই চিত্র উচ্চ এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হারে প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে চীনে ১৬–২৪ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বেড়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। যেখানে দেশটিতে শহুরে জনসংখ্যার মধ্যে বেকারত্ব ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। পুরো দেশের বেকারত্ব এর প্রায় তিনগুণ।
অবশ্য আইএলওর পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয়দের মধ্যে ১৫–২৯ বছর বয়সীদের ২০০০ সালে বেকারত্ব ছিল ৮৮ শতাংশ ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।
এ ছাড়া নারীদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষের হার ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। আবার গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে বেকারত্ব বেশি।
আইএলও বলেছে, ভারতে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বিশ্বে সর্বনিম্ন—প্রায় ২৫ শতাংশ। তবে মহামারির সময় থেকে জীবিকা নির্বাহের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি’ পেয়েছে।
প্রতিবেদনে তথাকথিত গিগ জব (ফ্রিল্যান্সিং বা প্রকল্প ভিত্তিক অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন কাজ) এবং ফুড ডেলিভারির মতো অস্থায়ী এবং স্বল্প বেতনের চাকরি বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছে আইএলও।
আইএলও বলছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো চাকরিজীবী এবং স্বনির্ভর ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্যকে এখন অস্পষ্ট করে তুলেছে। এই প্রবণতা কর্মীদের মঙ্গল এবং কাজের পরিবেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।