গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিয়োগ মনের মতো না হওয়ায় কলেজের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছেন এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। অধ্যক্ষের কার্যালয়েও তিনি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। শনিবার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই হেমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান তালুকদার হীরার বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেহের মাকসুদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও গোপালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়েছে পুলিশ।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের অবসরে যাওয়ার দুদিন আগে বৃহস্পতিবার রেজুলেশনের মাধ্যমে কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহের মাকসুদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুপুরে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অধ্যাপক মাকসুদ দায়িত্ব বুঝে নেন। কলেজের সদ্যবিদায়ি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, অধ্যাপক মাকসুদকে দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার সময় কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান হীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করে তাদের দুজনকে লাঞ্ছিত করেন। এরপর শিক্ষক ও কর্মচারীসহ সবাইকে বের করে দিয়ে হীরা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি ইউপি চেয়ারম্যান হীরা শুধু আমাদের লাঞ্ছিত করেননি। কলেজের সব শিক্ষককে তিনি লাঞ্ছিত করেছেন। আমি চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করছি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেহের মাকসুদ বলেন, বিষয়টি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি খন্দকার মশিউর রহমান রুমেলকে অবহিত করেছি। তার পরামর্শে বিষয়টি ইউএনও ও গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। তিনি আরও বলেন, ১৯৯৯ সালের ৬ মে কলেজে যোগদানের পর থেকে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কলেজ পরিচালনা পরিষদের শিক্ষক প্রতিনিধির দায়িত্বেও আছি। এ ঘটনার পর থেকে আমি আতঙ্কে আছি। ইউএনও’র পরামর্শে রোববার কলেজে যাইনি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, কলেজে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির বিষয়টি জানতে পেরেছি। লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। ইউএনও পারভেজ মল্লিক জানান, এ ব্যাপারে তিনি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। দুই পক্ষ থেকে দুই রকম বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে। তবে এখনো তিনি তদন্ত প্রতিবেদন পাননি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা শুনেছি। তদন্ত করা হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান হীরা জানান, কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে না জানিয়ে রেজুলেশন করে বিএনপিপন্থি শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিতে সভাপতি রুমেলও অবগত আছেন।
কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি খন্দকার মশিউর রহমান রুমেল বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পরিচালনা পরিষদের পরবর্তী সভায় এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যে বিএনপিপন্থি তা চেয়ারম্যান হীরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানাননি। শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।