একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক অধ্যাপক আবদুল গফুর মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ছেলে সাংবাদিক তারিক আল বান্না বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবদুল গফুর ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলার (তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা) খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দদাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অধ্যাপক আবদুল গফুর ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় মইজুদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে স্ট্যান্ড করা ছাত্র আবদুল গফুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তুলে। এ সময় এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের সঙ্গে অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল গফুর।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের বাংলা মুখপাত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে গফুর প্রথমে এর সহ-সম্পাদক ও পরে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সৈনিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার শিরোনাম ছিল ‘শহীদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ফলশ্রুতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পত্রিকাটির অফিস অবরোধ করে সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক আবুল কাসেমকে গ্রেপ্তার করে।
পরে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল গফুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক প্রদান করেন।
পেশাজীবনে আব্দুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুমের (ইসলামিক একাডেমি) সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পরে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুবকল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আবুজর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদকের।