ভিকারুননিসায় যমজ শিশুদের ভর্তির লড়াই - দৈনিকশিক্ষা

ভিকারুননিসায় যমজ শিশুদের ভর্তির লড়াই

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ‘প্রায় এক মাস ধরে আমার যমজ দুই সন্তান অসুস্থ। আমার মেয়ে আবিদা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও আরেক মেয়ে তাসনীম হাসান লটারিতে টেকেনি। প্রথম দিন আবিদাকে স্কুলে নিয়ে যেতে তৈরি করা হলে তাসনীমও যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। এরপর তাদের বাবা দুজনকে নিয়ে স্কুলে যান। চান্স না পাওয়ায় তাসনীমকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তার বাবা এক মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আরেক মেয়েকে নিয়ে স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করেন। স্কুল ছুটি হলে দুই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরেন’ এভাবেই তার বিড়ম্বনার কথা বলছিলেন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম।

আবিদা ও তাসনীম এর আগে একটি কিন্ডার গার্টেনে একসঙ্গে একই ক্লাসে পড়ত। এ বছর তাদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। লটারি পদ্ধতিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয় আবিদা। এরপর থেকে তাদের জীবনে শুরু হয় জটিলতা।

আবিদা ও তাসনীমের বাবা কামরুল হাসান  বলেন, ‘আবিদা তার বোনকে রেখে স্কুলে যেতে চায়নি। আবার বোন স্কুলে ঢুকায় তাসনীম বাসায় আসতে রাজি হয়নি। আমি অথবা আমার স্ত্রীকে এখন তাসনীমকে আবিদার স্কুলের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যমজ শিশুদের সমস্যা বা কষ্ট সবাই বুঝতে পারেন না। ইতিমধ্যে আমার দুটি মেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মনের ওপর চাপ পড়ায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।’

কেবল আবিদা-তাসনীম কিংবা তাদের অভিভাবকই নয়, ভিকারুননিসায় ভর্তি হতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে আরও সাত যমজ শিশু ও তাদের অভিভাবক। ওই যমজ শিশুদের একজন করে স্কুলটিতে ভর্তি হতে পেরেছে। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুরেও আরেকজনকে সেখানে ভর্তি করাতে পারেননি তাদের অভিভাবকরা। বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন তারা।

এদিকে স্কুল কর্র্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি নির্দেশনা মেনেই ভর্তি করেছে তারা। বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজে (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই-বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে সে সব সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই-বোনের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। কোনো দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য তা প্রযোজ্য হবে।’ এতে দেখা যায়, কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় অনেক যমজ শিক্ষার্থীর একজন ভর্তি হতে পারলেও আরেকজন পারে না। 

ভিকারুননিসা স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, কোটার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সহোদরা যে শাখা ও শিফটে অধ্যয়নরত সেই শিফট থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু যমজ শিশুদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যমজ শিশুর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে থেকে সহোদরার ভর্তি থাকার কোনো সুযোগ নেই।

গত বছরও একইভাবে ভিকারুননিসা স্কুলে ৫৬ জন ভর্তিচ্ছু যমজ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। ৫ শতাংশ কোটা থাকায় তাদের মধ্যে ৩৫ জন ভর্তি হতে পেরেছিল; বাকি ২১ জন পারেনি। ফলে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে ভর্তিচ্ছু ২১ শিক্ষার্থীর পক্ষে হাইকোর্টে আলাদা রিট আবেদন করেন তাদের অভিভাবকরা। সব রিটের শুনানি নিয়ে নীতিমালা স্থগিত করে তাদের ভর্তির নির্দেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার নীতিমালা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। পরে ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে ৫ শতাংশের বাধ্যবাধকতা অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং ভর্তি হতে না পারা ২১ জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর সেই ২১ শিক্ষার্থীকে ভিকারুননিসা স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়।

এদিকে যমজ শিশুদের ভর্তি নিয়ে ২০২১ সালের ১০ আগস্ট আরেক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বলেছিল, যমজ শিশু হলে একসঙ্গে ভর্তি নেওয়া উচিত এবং ভর্তি নিতে হবে। রুলে ওই শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ সাত বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু পরে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ জামাল হুসাইন বলেন, ‘আমরা আদালতকে যমজ শিশুদের একসঙ্গে পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাখ্যা করেছি। আদালত সব শুনে সিট খালি থাকা সাপেক্ষে এই শিশুদের ১৫ দিনের মধ্যে স্কুলে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।’

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘যারা আইডেন্টিক্যাল টুইন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন অসুস্থ হলে আরেকজন অসুস্থ হয়। এই শিশুদের আচার-আচরণও একইরকম হয়। ফলে তারা যখন হঠাৎ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা আলাদা স্কুলে ভর্তি হয় বিষয়টি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। উন্নত বিশ্বে আমি দেখেছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত যমজ শিশুদের একই স্কুলে ভর্তি হতে উৎসাহ দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষ তারা কলেজ পর্যন্তও একই সঙ্গে পড়াশোনা করে। বিষয়টি মানবিকভাবে চিন্তা করতে হবে।’

সার্বিক বিষয় জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha ৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড - dainik shiksha অটোরিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু, ৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন - dainik shiksha ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ - dainik shiksha বাউবিতে বিএড প্রোগ্রামে ভর্তি, আবেদন ফি ৭০০ চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ - dainik shiksha চবিতে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করুন, ফি ১০০০ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037288665771484