দেশে পরীক্ষাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো পাবলিক পরীক্ষা। এদেশে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসির পাবলিক পরীক্ষায় বেশ হৈ-চৈ পড়ে যায়। যদিও এখন আর পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে অনেকেই দাবি করছেন এই দুই পাবলিক পরীক্ষা ফিরিয়ে আনতে। ফিরে আসা না আসা পরের বছরের বিষয়। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দুটি পক্ষ হয়ে যায়। এক পক্ষ যারা ভালো ফল করতে পারে এবং অন্যদিকে যারা ভালো ফল করতে পারে না।
কেউ ফেল করে। যারা ফেল করা মেনে নিতে পারে না তাদের কেউ কেউ আত্নহত্যা করে বসে! এরপর আবার ফল চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয়া হয়। যারা ফল চ্যালেঞ্জ করে তাদের অনেকেই আবার পাস করে যায় বা ফল পরিবর্তন হয়। এই সংখ্যা শুরুতে কম থাকলেও দিন দিন কিন্তু বাড়ছে। প্রশ্ন হলো এই সংখ্যা এতো বেশি হচ্ছে কেনো? হতে পারে কিছু ভুল তবে তা একো বেশি হওয়ার কথা না। এই দায় নেয়ারও কেউ নাই। কারণ, ভুল তো সংশোধনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় ফল প্রকাশের পর একই চিত্র দেখা গেছে। এবার যদিও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশিত হয়েছে বলে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর পুনরায় নিরীক্ষণ করা হয়েছে। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করা ৪ হাজার ৫৯৯ জন পরীক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী, ফেল থেকে পাস করেছেন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং ফেল থেকে জিপিএ-৫ ও পেয়েছেন কেউ কেউ। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড প্রকাশিত পুনর্নিরীক্ষণের ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এতো বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হওয়া মানে প্রথম মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকদের বেশ গাফিলতি ছিলো বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। বিশেষত ফেল থেকে যারা পাস করেছেন সে সংখ্যাটা কিন্তু লক্ষণীয়।
এবার আসা যাক শিক্ষার্থীদের অনুভূতির বিষয়ে। যাদের ফলাফল সেই সময় ফেল দেখানো হয়েছিলো তারা এখন পাস করেছে কিন্তু ঠিক ওই মুহূর্তের আনন্দটা পাচ্ছে না। আবার তারা ঠিক সেই সময় যতোটা মানসিক চাপ নিয়েছে বা তাদের পরিবার তাকে নিয়ে যেভাবে মন্তব্য করেছে সেটা তো আর ফিরে আসবে না। আবার যারা প্রথমেই পাস করতে পেরেছে তারা তো উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি আগে শুরু করতে পেরেছে যা অনেকেই পারেনি। কারণ, এইচএসসি পরীক্ষার পরেই বেশিরভাগ যায় কোচিং করতে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা মেডিক্যালে ভর্তি হতে। এখন যাদের প্রথমে পাস আসেনি তাদের আর যাইহোক একটা খটকা ঠিকই থেকে যায়।
ফলে পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে পারেন না। এতো সব দায় নেয়ার কেউ আছেন কি? যদিও বলবেন এটা ভুল। ভুল মানে তো আর দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ থাকে না! কিন্তু একই ভুল বছরের পর বছর না হয়ে যদি একটু সতর্ক হওয়া যায় সেটাই উত্তম হয়। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফল পুনর্নিরীক্ষণে একজন শিক্ষার্থীর লেখা খাতা নতুন করে আবার মূল্যায়ন করা হয় না। চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলে উত্তরপত্রের চারটি বিষয় দেখা হয়। সেগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে তোলা হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এ চার জায়গায় কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়। এই কাজগুলো প্রথমেই সতর্কতার সঙ্গে করা সম্ভব ছিলো।
কারণ, যারা এই কাজটি করছেন তারা নিজেরাও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আজ এখানে এসেছেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশ যদি ভুল হয় তা পরীক্ষার্থীর ওপর কতোটা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে সেটা নিজেরাও জানেন। ভালো রেজাল্ট ও খারাপ রেজাল্টের পার্থক্যও বোঝেন। তারপরও এসব ভুলভ্রান্তি করেন! শতভাগ ভুল না করা তো আর একেবারেই সম্ভব না। মানে ভুল একটু-আধটু হবেই। কিন্তু এতো বেশি হবে কেনো প্রশ্নটা সেখানে। যাদের খাতা নিরীক্ষণ করা হচ্ছে তাদের জায়গায় নিজের সন্তানদের চিন্তা করা যেতে পারে। তাহলে একটু কেয়ারফুল বেশি হওয়া সম্ভব। মানে যেকোনোভাবেই হোক এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বিষয়টি কমানো যেতেই পারে। ভুলের শেষে দুঃখিত না বলে ভুলটাকেই দূর করে দিতে হবে। তাতেই মঙ্গল দেশ ও দশের।
লেখক: শিক্ষক