সমন্বিত বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রি চালুর দাবিতে ৪২ দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। গত ৬ জুন থেকে বন্ধ হয়ে আছে অনুষদের সব শিক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি সমন্বিত ডিগ্রি চালু না করার দাবিতে ৮ জুন থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩০ মে প্রকাশিত সরকারি চাকরিসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ওই আন্দোলন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নন–ক্যাডার কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার কয়েকটি পদে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিকে অন্তর্ভুক্ত না করে সমন্বিত ডিগ্রিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই পদগুলোর বিপরীতে আবেদন করতে পারবেন না ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে সারা দেশে সমন্বিত ডিগ্রি চালু এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে ভেটেরিনারি ডিগ্রি সংযুক্তির দাবিতে টানা ৪২ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ভেটেরিনারি অনুষদ ছাত্র সমিতির সহসভাপতি মো. শাহরিয়ার খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দাবিটি আসলেই যৌক্তিক। সমন্বিত ডিগ্রি চালু না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে নারাজ। শিক্ষকেরা চাচ্ছেন যে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করি। আমরা দাবি আদায় করে তবেই ক্লাসে ফিরব।’
ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘এই আন্দোলন আমাদের অস্তিত্বের আন্দোলন। চাকরির বাজারে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার লড়াই। পাঁচ বছর যাবৎ পড়াশোনা করে যদি চাকরির ক্ষেত্রে আবেদনের সুযোগটিই না পাই, তাহলে এই পরিশ্রম বৃথা। আমাদের দাবি পূরণ করেই ক্লাসে ফিরব আমরা।’
একই প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে সমন্বিত ডিগ্রি চালু না করার দাবিতে ৮ জুন থেকে দুই সপ্তাহ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিলেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে বর্তমানে ক্লাস-পরীক্ষা চলমান রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির সহসভাপতি রেজউয়ান উল আমিন বলেন, ‘আন্দোলনের প্রথম দুই সপ্তাহে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিলাম। পরবর্তী সময়ে করোনাকালীন ক্ষতি মাথায় রেখে সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করি। তবে আমাদের আন্দোলন বন্ধ হয়নি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর বিষয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসুক। মূলত চাকরি নিয়ে শঙ্কিত থাকার কারণেই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের আন্দোলনের বিষয়টির সমাধান পুরোটাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের হাতে। শিক্ষকদের হাতে কিছুই নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁরা মন্ত্রণালয় ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এখনই তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টির কোনো সমাধান আমার কাছে নেই। আমি শিক্ষার্থীদের কাছে সময় চেয়েছি। শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব, আমি করার চেষ্টা করব।’
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আন্দোলন যত এগোবে, সেশনজট তত বাড়বে। ইতিমধ্যেই তাঁরা দেড় মাসের মতো পিছিয়ে গেছে। সেশনজটের ব্যাপারে অনুষদের ডিনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’