কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, মতপার্থক্য থাকার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ পুরোপুরি অনুকূলে নয়। তবে অচিরেই এই মতপার্থক্য দূর হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। কিন্তু নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারিনি। আমরা বলেছি-যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে দেড়ঘণ্টাব্যাপী। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ও রাশেদা সুলতানা এই বৈঠকে অংশ নেননি। এছাড়া ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ১১ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, উনারা বলেছিলেন যে ইভিএম নিয়ে অবিশ্বাস আছে কি-না।
আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল তা অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। তবে এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না, কারণ আদৌ ইভিএম এভেলেবল হবে কি-না। আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারবো সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। উনাদেরে সঙ্গে আমাদের এতটুকুই আলোচনা ছিল।
পলিটিক্যাল ডায়ালগের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। ব্যাপক অর্থে, তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হয়। আমরা বলেছি এই আবেদনটা আমরা প্রথম থেকেই করে আসছি এবং এখনো করে যাচ্ছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিনিধিদল আগেও নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে তখন নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। এখন যেহেতু আমাদের দশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। আমরা নির্বাচন বর্ষে উপনীত হয়েছি। তাই উনারা পুনর্বার মতবিনিময় করতে এসেছেন। মূলত আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন তা জানতে এসেছিলেন। আমরা উনারদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছি নির্বাচনের কোন কোন বিষয় উনারা জানতে চান। উনারা আমাদের ইলেকটোরাল রোল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, আমরা অবহিত করেছি। সংসদীয় আসনের সীমা পুনঃনির্ধারণ, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আমাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি-না, এই বিষয়গুলো তাদেরকে জানিয়েছি। আমাদের বর্তমান অবস্থানটা পরিস্কার করেছি। আমরা জানিয়েছি আমরা প্রস্তুত আছি।
প্রতিনিধিদলের পক্ষে থেকে কোনো সুপারিশ আছে কি-না জানতে চাইলে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল-আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কী ধরনের সহযোগিতা দিতে পারবো। আমরা বলেছি যে, গণমাধ্যম আমাদের নির্বাচন কভার করে থাকে, পর্যবেক্ষকরাও করে থাকে। এবার আমরা ফুললি ওপেন হবো। আমাদের তরফ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না। ফরেন অবজারভার সম্পর্কে আমাদের একটা পলিসি আছে। তারা আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেবো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কারণ, বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা হতে হবে। কিন্তু আমরা বলেছি, আমাদের তরফ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি বিদেশী পর্যবেক্ষকে এলাউ করবেন। কারণ একটা বৃটিশ এমপি ডেলিগেশন উনার সঙ্গে মিট করেছিল। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে আশ্বাস দিয়েছেন। উনারাও এতে আনন্দিত, আমরাও এতে আনন্দিত যে বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও যদি এসে আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, সারাবিশ্বও দেখবে যে আমাদের দেশের নির্বাচনটা সুন্দর, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইইউ’র হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আমাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে শেষ বৈঠকের পর থেকে এটির আরো অগ্রগতি হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিদেশী মিশনের সাথে কথা বলার জন্য আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইইউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ইতিবাচক। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের কাজ এবং অগ্রগতিতে প্রযুক্তিগত এবং পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের ইসির প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আমাদের আলোচনা বেশি হয়েছে। সবাই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই আমরা ইসির কাছে কোনো সুপারিশ করিনি।