দৈনিক শিক্ষাডটকম, পিরোজপুর : বয়স, দারিদ্রতা আর পরিবার, কোনো কিছুই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি হায়দার আলীর শিক্ষা অর্জনের পথে। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া শেখার অদম্য আগ্রহ তাকে বিএ পাস করতে সাহায্য করেছে। রাতে পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে এবং দিনে ভ্যান চালানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা করতেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, ইংরেজিতেও তার বেজায় দখল। কথায় কথায় ইংরেজি বলার প্রাকটিস ও নতুন শব্দ শেখার আগ্রহ তার শব্দ ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ।
৪৭ বছর বয়সী ৪ সন্তানের জনক হায়দার আলী পেশায় একজন ভ্যানচালক। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখ মাটিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত কাঞ্চন খানের ছেলে। অভাব অনটন আর নিয়তির সঙ্গে লড়াইটা সেই শৈশব থেকেই।
৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন তার বাবা-মারা যান। লড়াইটা সেখান থেকেই শুরু। মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন শিশু হায়দার। তবে পড়াশুনা বন্ধ করেননি তিনি। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করার পর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে দেন এইচএসসি পরীক্ষা। অর্থনীতিতে খারাপ করায় লেখাপড়া বন্ধ করে পারি জমান ঢাকা। সেখানে বিয়ে করেন তিনি। এক সময়ে বাড়িতে ফিরে এসে নতুন করে শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। কখনো ভ্যান চালানো, দিন মজুরের কাজ কিংবা মাছ ধরা এই তার জীবিকার উৎস।
পাশাপাশি দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। এ সময় এক স্কুল শিক্ষকের কোনো এক কথায় তিনি মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হন। সংকল্পে দৃঢ় হন তিনি। শুরু করেন লেখাপড়ার নতুন সংগ্রাম। নিজ ছেলে মেয়েদের পাশাপাশি আবার শুরু করেন লেখাপড়া।
কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। এসএসসি পাসের প্রায় দুই যুগ পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পাস করেন এইচএসসি। আর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নাজিরপুর কলেজকেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউবিতে ডিগ্রিতে ভর্তি হন তিনি। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা।
অভুক্ত, ঘরে খাবার নেই। পরদিন পরীক্ষা। তখনো জানে না, বাচ্চারা কী খেয়ে রাতে ঘুমাতে যাবে? এমনই পরিস্থিতিতে দেন বিএ পরীক্ষা। অতিসম্প্রতি বাউবির বিএ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ২.৫৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন হায়দার আলী।
হায়দার আলী জানান, ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ৩ ‘শ- ৪ ‘শ টাকা আয় হয়। আমার পৈতৃক সম্পত্তির মধ্যে একটি ঝুপড়িঘর আর ৩ শতাংশ জমি আছে। এছাড়া আমার কোনো সম্পত্তি নেই। এখন আমার স্বপ্ন এমএ পাস করার। যতো বছরই লাগুক আমি এমএ পাস করবোই করবো।
চাকরির জন্য না, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার বাসনা থেকে এ শিক্ষা অর্জন করছি। তারপরও যদি একটি অন্য কাজ পাই, তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরে একটি শিক্ষাবৃত্তি থাকে, হায়দার আলী আবেদন করলে তার জন্য তিনি চেষ্টা করে দেখবেন।