ভারতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে সরকারিভাবে ২৮৮ জনে পৌঁছেছে। এ দুর্ঘটনায় ছয় বাংলাদেশিসহ আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরে রেলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে। ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় গোটা ভারত সমাজমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন বলিউড, টালিউড ও দক্ষিণী ছবির তারকারা।
আহতদের মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশি থাকার কথা শনিবার বিকেলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উপদূতাবাসের আধিকারিকরা।এদের মধ্যে ২ জন আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত এক দম্পতি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। আর দুই জনের পরিবারের পক্ষ থেকে উপদূতাবাসে ফোন করে জানানো হয়েছে, তাদের দুই পরিজন এই ট্রেনে করে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। তাদের আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে চারজনের পরিবারের পক্ষ থেকে উপ দূতাবাসের হটলাইনে ফোন করে জানিয়েছেন তাদের পরিজনরা নিখোঁজ রয়েছেন।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে করে বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য চেন্নাই ও আশপাশের জায়গাগুলোতে যান। বাংলাদেশেরও বহু মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশে এই ট্রেনে করেই চেন্নাই যান। আবার বাঙ্গালোর থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে করেও বহু রোগী ও তাদের পরিজনরা ফিরে আসেন। ফলে দুটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ায় স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে অনেক মানুষ উদ্বেগে রয়েছেন।
বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রথম (প্রেস) সচিব রঞ্জন সেন বলেন, এই ট্রেনটিতে করে বাংলদেশিরা চিকিৎসার জন্য চেন্নাই বা অন্যত্র যান, তাই বাংলাদেশিদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসের এক প্রতিনিধিদল সেখানে গিয়ে পৌঁছেছেন।
তিনি আরও জানান, আহত এক বাংলাদেশি দস্পতি প্রাথমিক চিকিৎসার পর শনিবার কলকাতায় ফিরে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকে একজন ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের এক পরিজন আহত অবস্থায় ওড়িশার সোরো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। উপদূতাবাসে একটি হটল্ইান (৯০৩৮৩৫৩৫৩৩) চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ যোগাযোগ করে তাদের আত্মীয় পরিজনদের খবর জানতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রেল মন্ত্রকের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা আগেই জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১০ থেকে ১২টি কামরা ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত হয়। সেই কামরাগুলো ছিটকে পড়ে পাশের লাইনে। সেই লাইনে সেইসময় হাওড়াগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেস আসছিল। ফলে সেই ট্রেনটির সঙ্গেও করমন্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলোর সংঘর্ষ হয়। এতে হাওড়াগামী ট্রেনটিরও দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুটি ট্রেন ছাড়াও একটি মালগাড়িও দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিল। ফলে দুর্ঘটনা নিয়ে সাবিক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রেলের বক্তব্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের বিস্তর অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে।
সিগনালে ত্রুটি নাকি চালকের ভুল, কিসের জেরে এত যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ট্রেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গকে এককালীন ১০ লক্ষ রুপি, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ রুপি এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রেন দুর্ঘূটনা নিয়ে শনিবার দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করেছেন। পরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথা বলেন রেলের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও।
আগেই রেল দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই দুঃখের মুহূর্তে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে হতবাক হয়ে গিয়েছি। তিনিও এদিন ঘটনাস্থলে যান। ওড়িশা ও তামিলনাডুতে শোক দিবস পালন করার কথা জানানো হয়েছে।