জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে উঠতে না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ অতিথিকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দুজন সভাপতিকেও লাঞ্ছিত করে তারা৷
শুক্রবার (১০ মার্চ) রাত ১১ টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ৩২ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অভিযুক্তরা সকলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, ৩২ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে পারফর্ম করছিলেন সোলস ব্যান্ডের পার্থ বড়ুয়া৷ এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করে। এসময় আয়োজকরা অনুষ্ঠানের স্বার্থে ঢুকতে বাধা দেয়৷ এসময় পার্থ বড়ুয়ার সাথে আসা লিটন নামের একজনকে মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ এসময় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন পরিস্থিতি থামাতে গেলে তাকেও মারধর করে তারা। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বিশ্বিবদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ এবং সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিনকেও লাঞ্ছিত করে তারা।
শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন রনি, উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক উৎস দত্ত, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক অরবিন্দ ভৌমিক, সহ-সভাপতি কে এম রহমান জাকারিয়া, উপ-আন্তার্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সবুজ রায়ের নেতৃত্বে মারধর করা হয়। এসময় তাদের সাথে ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন।
এসময় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত এক সাংবাদিক লাঞ্ছনার শিকার হন।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, আমি দেখতে পেলাম অনেকগুলো ছেলে মিলে লিটনকে মাটিতে ফেলে মারধর করছে। এসময় আমি পরিচয় দিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করি। আমার উপর চড়াও হয়ে আমাকে মারধর করা শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩২ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, অতিথিকে মারধরের সময় সোহেল পারভেজ ও শাফিন ছেলেদের আটকানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এসময় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিনকে বেধড়ক মারধর করেন।
রাশেদুল ইসলাম শাফিন বলেন, ঘটনার সময় আমি দর্শক সারিতে ছিলাম। হঠাৎ করেই কিছু ছেলে মঞ্চে উঠে মারধর শুরু করে। আমি সোহেল ভাইসহ ঘটনা থামাতে গেলে আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো চড়াও হয়। ওরা পুরো তিনদফায় মারামারি করে৷
মারামারির সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত উৎস দত্ত বলেন, আমি তখন মুক্তমঞ্চের পাশে ছিলাম । এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আমি শোনার পর মুক্তমঞ্চে গিয়ে দেখি আমার হলের জুনিয়ররা সেখানে ঝামেলা করতেছে। তাই আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে হলের সিনিয়র হিসেবে সেখান থেকে জুনিয়রদের পাঠিয়ে দেই। আমি এই মারামারিতে সম্পৃক্ত নয়। কেউ যদি বলে থাকে আমি সম্পৃক্ত তবে সেটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে বলেছে তারা।
অভিযুক্ত আকাশ তুহিন বলেন, আমিতো উপস্থিত ছিলাম মুক্তমঞ্চে। কি ঘটেছে ভিতরের কাহিনী বিস্তারিত জানিনা। দেখলাম ঝামেলা হচ্ছে। এটা একটা রঙ ইনফরমেশন, আমি এমন কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি দর্শকদের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
বাবুল হোসেন রনি, সবুজ রায়ের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেনি।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলে, আমি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে এসেছি। এই অপ্রীতিকর ঘটনার খবর জেনেছি। ক্যাম্পাসে ফিরে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা সাবেক দুই সভাপতি লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরকম কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম, মাত্র ক্যাম্পাসে এসেছি। মোবাইলে টুকটাক জেনেছি। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নিবো।’