২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সেপ্টেম্বরে পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহাজনপাড়ার তৌহিদুল ইসলামের ছেলে বাশির পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া চাচাতো বোনের ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষক বাশিরের পিতা ওই কিশোরীর সঙ্গে তার ছেলের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন (৪নং ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়া তার নিজ বাড়িতে উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশে বসেন। এ সময় ধর্ষক বাশিরের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশে ধর্ষককে ৭২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের ওই কিশোরী। নিহতের পরিবার জানিয়েছিলেন, ৭২ হাজার টাকায় ধর্ষণের সমাধান মানতে না পেরে সালিশেই তাদের সাফ জানিয়ে দেয় এ বিচার মানি না। শুধু তাই নয়, ৭২ হাজার টাকায় সমাধান হলেও কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়া তাদের পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১২ হাজার টাকা নিজের কাছে রেখে দেন। সে সময় ধর্ষণের মতো মীমাংসার অযোগ্য অপরাধের বিচার ও কিশোরীর আত্মহত্যায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সেই মতিউর রহমান মটন মিয়ার ‘আদালতে’ গত ২৬ মার্চ আরেক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের বিচার হয়েছে। মটন মিয়ার নিজ বাড়িতে ধর্ষকের অনুপস্থিতিতে সালিশ করা হয়।
সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়া ও ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বর্তমান নারী কাউন্সিলর কারিমা খাতুন ঘটনাটির সালিশ করেন। ধর্ষকের পিতাকে কতো টাকা জরিমানা করা হয়েছে সেটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে মেয়ের বাবাকে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালিশী বোর্ডের সভাপতি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর কারিমা খাতুন।
জানা গেছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুরে নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন ৩ মাস আগে। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে হরিপুর গ্রামের মো. আজিজুরের ছেলে আরাফাত আলী। বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশীরা ওই ধর্ষককে আটক করে। জানাজানি হলে অঙ্ক খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয় তাদের। পরের দিন স্কুলছাত্রীর বাড়ি থেকে চলে আসে আরাফাত। এরপরই অস্বীকার করে ধর্ষণ আর বিয়ে। এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিলে ৩ মাসেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরমধ্যে বিদেশে চলে যায় অভিযুক্ত ধর্ষক। গত ২৬ মার্চ সেই মতিউর রহমান মটন মিয়া তার নিজ ‘আদালতে’ স্কুলছাত্রী ধর্ষণের মীমাংসা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান মটন মিয়া বলেন, ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ৩ মাস আগে গভীর রাতে ওই ছেলে মেয়ের বাড়িতে যায়। অনৈতিক কাজ করে এমন অভিযোগে প্রতিবেশীরা তাদের মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। তবে মেয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় কোনো রেজিস্ট্রি হয়নি। পরে ছেলে সব অস্বীকার করলে মেয়ের পরিবার থানায় অভিযোগ দেয়। কিন্তু আইনগত কোনো ব্যবস্থা হয়নি। ২৬ মার্চ উভয় পরিবারের সম্মতিতে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় সমাধান করা হয়েছে। মেয়ের বাবা অনেক গরিব তাই কোনো ঝামেলায় যেতে চাননি।
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ধর্ষণ নয়, বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে এমন সালিশের বিষয়ে জেনেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আইনের ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।