মতবিনিময়ের নামে শিক্ষকদের মধ্যে সিনেটের নির্বাচনী প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বিরুদ্ধে। সিনেটের ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আজ সোমবার এ ভোটগ্রহণ হবে। এ নির্বাচনে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম মতবিনিময়ের নামে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।
আট বছর পর হতে যাওয়া এ নির্বাচনে দুটি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষকরা। আওয়ামী লীগপন্থিরাও বিভক্ত হয়েছেন এ দুই প্যানেলে। একটি প্যানেল হয়েছে শুধু আওয়ামী লীগপন্থিদের নিয়ে, এই অংশ বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করছে। অন্যটিতে আওয়ামীপন্থিদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপিপন্থিরাও, এ প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে শিক্ষক ঐক্য পরিষদ।
গত ২ অক্টোবর রাতে ৩৩ সদস্যের নির্বাচনী প্যানেল ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ। এরপর ৩ অক্টোবর বিকেলে আওয়ামীপন্থিদের আরেকটি অংশের শিক্ষকরা মিলে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠন গঠন করে। যারা পরে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ গঠন করে প্যানেল ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমর্থিত প্যানেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর অন্য প্যানেলটিকে অনেকে উপাচার্যবিরোধী তকমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর বিকেলে নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপাচার্য। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নামে ফেসবুক গ্রুপে বার্তা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের এ সভায় উপস্থিত থাকতে বলেন সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ।
শিক্ষক ঐক্যপরিষদ নেতারা বলছেন, উপাচার্য যে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন, তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব বিষয়টি সমন্বয় করায় প্রশ্ন জেগেছে। উপাচার্য শিক্ষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে ধারণা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকদের সঙ্গে উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মতবিনিময় সভা হয় গত ১২ অক্টোবর। যদিও শিক্ষক ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ সংক্রান্ত বার্তায় শিক্ষক সংগঠনটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আলমগীর কবির ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সহযোগী অধ্যাপক’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া গত শনিবার বিকেল ৪টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের লাউঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, হাউজ টিউটর ও সহকারী হাউজ টিউটরদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময় সভা হয়। প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা এ সংক্রান্ত বার্তা সংশ্লিষ্টদের পাঠান।
ওই সভার কিছু ছবি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন শিক্ষকরাও সভায় উপস্থিত রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, উপাচার্য একটি দলনিরপেক্ষ পদ। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তাকে কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি কোনো ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নয়। মাঠপর্যায়ের নির্বাচনী বিধি আর এখানকার বিধি এক নয়। এখানে সবাই বিধিনিষেধের বাইরেও ন্যায় ও নীতিসংগত আচরণ প্রদর্শন করবেন ধরে নিয়েই বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উপাচার্যের মতবিনিময় সভার বিষয়টি বিধিবদ্ধ আচরণ পরিপন্থী না হলেও নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামছুল আলম সেলিম বলেন, ‘ছুটির দিনে মতবিনিময় সভা আয়োজন সম্পূর্ণ নৈতিকতার পরিপন্থী, যা সুষ্ঠু নির্বাচনী চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রার্থী ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সিনেটের সভাপতি উপাচার্যের কাছে আমরা নৈতিক, ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ অবস্থান প্রত্যাশা করি।’ এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও উপাচার্যের বক্তব্য মেলেনি।