মন্ত্রীদের নিজেদের বক্তব্যে সংযত হতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো মন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারকে বিব্রত হতে হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব বিষয় সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সরকারপ্রধান। তাই সংশ্লিষ্টদের কথাবার্তায় সাবধান হতে হবে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। কয়েক সপ্তাহ পর এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে নির্ধারিত এজেন্ডা শেষে উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার মতো অনির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো মন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন কাজ ঠিকমতো তুলে ধরতে পারছেন না। কারও কারও কথাবার্তা গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন হচ্ছে। এসব বিষয় নিজের নজরে আছে জানিয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ঠিকভাবে কথাবার্তা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
জানা গেছে, বৈঠকে একজন প্রতিমন্ত্রী নিজ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল তাঁর কাছে যায় না বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন। জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, দুপুর ১২টার পর মন্ত্রণালয়ে যাওয়া, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন অফিস না করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ফাইল কেন আসে না তা বুঝে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মন্ত্রণালয় চালাতে গেলে ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে, সামনে থেকে মন্ত্রণালয়কে নেতৃত্ব দিতে হবে, মিন মিন করে মন্ত্রিত্ব হয় না। সব খবরই আমার কাছে আসে।
অন্যদিকে গণমাধ্যমে মন্ত্রীদের কথাবার্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নিয়ে তাঁর একটি নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে একই বিষয়ে তাঁর ইতিবাচক কথা ছিল। কিন্তু সেটা গণমাধ্যমে আসেনি।
গত শনিবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘রাজউক গরিব মানুষের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে বড়লোকদের কাছে বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে শহর থেকে গরিব তাড়ানোর কাজ করছে তারা। গরিব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এদিক-সেদিক থাকছে। আর বড়লোকরা আরও ধনী হয়েছে। রাজউক নগর উন্নয়নে কতটুকু করেছে, আর গরিব তাড়ানোর জন্য কতটুকু করেছে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানেই আমি বলেছি, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গরিবরা আগে যা পেত এখন তার চেয়ে তিন গুণ বেশি পাচ্ছে।’ গণমাধ্যমে তার এই ভাষ্যটি আসেনি বলে দাবি করেন এম এ মান্নান।
অন্যদিকে সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য ম্লান করতে কেউ কেউ উঠেপড়ে লেগেছে উল্লেখ করে এ খাতের গণমাধ্যমে আসা সমালোচনার বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিমন্ত্রী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আইএমইডি (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) থেকে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়নের খবর এসেছে। এটা সরকারের নীতির ঠিক বিপরীত। এসব জায়গায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কেউ কাজ করছে কিনা সেই সন্দেহ পোষণ করেন প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে সরকারের সার্বিক সাফল্যকে ম্লান করতে দু-একটি গণমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে বলে বৈঠকে অভিযোগ করা হয়।
সূত্র জানায়, অনির্ধারিত বৈঠকে মন্ত্রীদের বেশি বেশি নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সরকারের সাফল্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এলাকার জনপ্রিয়তাতেই আগামী নির্বাচনের জন্য মূল্যায়ন করা হবে। মন্ত্রিত্ব কোনো মাপকাঠি হবে না। একই সঙ্গে বিএনপি নেতারা যেসব বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করছে সেসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের বলিষ্ঠভাবে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেছেন, দায়িত্বশীল জায়গায় থাকলে কোন কথা বললে কী হবে তা বুঝেশুনে বলা উচিত। দায়িত্বশীল ব্যক্তির সামান্য একটি নেতিবাচক কথাও সরকারের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।