মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানিয়েছেন আত্তীকৃত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। অধিদপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা নানা ষড়যন্ত্র করে সরকারিকৃত কলেজে আত্তীকৃত ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চিত করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। এ ধরণের কর্মকর্তাদের অধিদপ্তর থেকে অপসারণ করে আত্তীকৃত হয়ে ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
এসব দাবিতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি তুলে ধরবেন ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক ফোরামের (বাসকশিফো) ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক হোছাইন মুহাম্মদ জাকির।
সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সব অর্জন ও সফলতাকে পেছনে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা জাতির মেরুদন্ড শিক্ষাকে ধ্বংস করে সরকারের ভিশন-২০৪১ এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে চায়। সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এসব রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কর্মকর্তাদেরকে চিহ্নিত করে অধিদপ্তর থেকে বের করে মাউশির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আত্মীকরণ বিধিমালা- ২০০০’ অনুযায়ী আত্তীকৃত শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষাবান্ধব সরকার মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারি স্কুল-কলেজ নেই এমন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) দায়িত্বরত একটি বিশেষ মহল তা বাস্তবায়নে তালবাহানা করে আসছে। আত্তীকরণের ১০ বছর পার হলেও অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরি নিয়মিতকরণ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ হলেও বছরের পর বছর ধরে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। জুনিয়ররা পদোন্নতি পেলেও আত্তীকৃত যোগ্য সিনিয়র শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে বিধিসম্মতভাবে সুনির্দিষ্ট অধিকার পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও কোনো সাড়া মিলছে না। সময়ক্ষেপণ করায় ইতোমধ্যৈই অসংখ্য শিক্ষক নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি ছাড়াই চাকরিজীবন শেষ করে খালি হাতেই অবসরে চলে যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে ভূক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক হোছাইন মুহাম্মদ জাকির অভিযোগ করে বলেন, ১৯৮১ বিধিতে আত্তীকৃত ১৮ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষকদের দায়েরকৃত একটি মামলার রায়ের অপব্যাখ্যা দিয়ে ২০০০ বিধিতে নিযুক্ত আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে অহেতুক ওই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ তারা কেউ ওই মামলার পক্ষভুক্ত নন এবং ১৯৮১ বিধিতে আত্তীকৃতদের সঙ্গে তাদের বিধিগত কোনো মিল বা সম্পর্কও নেই।
আগামী এক মাসের মধ্যে বঞ্চিতদেরকে আত্তীকরণের তারিখ থেকে নিয়মিতকরণ, স্থায়িকরণ ও পদোন্নতি দেয়া দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
নেতারা জানান, শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রশাসন ক্যাডার পদায়নসহ বেশ কয়েকদফা দাবি জানাবেন তারা। দাবিগুলো হলো, নিয়মিতকরণ বঞ্চিত আত্তীকৃত ক্যাডারভুক্ত প্রভাষকদের ২০০০ বিধির ৬(৫)-এর আলোকে আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়মিতকরণ করা, স্থায়ীকরণ বঞ্চিত বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব সব শিক্ষককে আগামী এক মাসের মধ্যে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করা, স্থায়ীকরণ বঞ্চিত সব যোগ্যতা অর্জনকারী শিক্ষকদের আগামী এক মাসের মধ্যে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করা, পদোন্নতি বঞ্চিত সব আত্তীকৃত ক্যাডারভুক্ত শিক্ষককে আগামী এক মাসের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। তাদের দাবিগুলো মধ্যে আরো আছে, কোনো কলেজের শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিতকরণ না হওয়া পর্যন্ত সংযুক্তিতে বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগকৃত কোনো শিক্ষককে জাতীয়করণকৃত কোনো কলেজে পদায়ন না করা এবং ইতোমধ্যে যাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে তাদেরকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী ভুতাপেক্ষভাবে কলেজ সরকারিকরণের তারিখ থেকে সব কর্মকর্তাকে নিয়মিত করা, নিয়মিতকরণ ছাড়া সব আত্তীকৃত শিক্ষককে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন ১৯৯৪ অনুযায়ী কলেজের দেয়া বার্ষিক বর্ধিত বেতন যোগ করে বেতন নির্ধারণ করা বা পে প্রটেকশন নিশ্চিত করা এবং জাতীয় বেতন স্কেল-২০০৯ অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়া।