গাজীপুরের টঙ্গীর কেরানিরটেক বস্তির ইব্রাহিম মারুফ সিনথিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ, বাতেরটেক বস্তির সেলিম মিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ এরকম বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে জমকালো পিকনিকের আয়োজন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এসব ব্যক্তি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। শনিবার (৯ মার্চ) দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত ২ মার্চ গাজীপুরের ছুটি রিসোর্টে এই পিকনিকের আয়োজন করা হয়। তবে পিকনিকের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেয়নি ডিএনসি। পিকনিকে যোগ দিয়েছেন কিন্তু ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই পিকনিক আয়োজন করেন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী এবং গাজীপুর জেলার উপপরিচালক মেহেদী হাসান। তারাই পিকনিকের সব ব্যয়ভার বহন করেন। বিপুল এ ব্যয়ের উৎস বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে পাওয়া অর্থ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসির কয়েকজন কর্মচারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত শুক্রবার সরেজমিন ছুটি রিসোর্টে গেলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আহসান বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৮০০ লোকের জন্য রিসোর্টটি ভাড়া নিয়েছিল। রিসোর্টটিতে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকেলের চা-কফি এবং নাশতা মিলে জনপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকার মতো দিতে হয়। এর সঙ্গে বেশ কিছু কক্ষও ভাড়া নিয়েছিলেন আয়োজকরা।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পিকনিকের খরচ বাবদ ২ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চাঁদা দেওয়া সবাই মাদক কারবারি। এর মধ্যে শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরে চোলাই মদের আস্তানা থেকে ২ লাখ, কাওরাই স্টেশনের বস্তির একজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ২ লাখের নিচে কারও কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ীর বিভিন্ন আস্তানা থেকে ডিএনসির গাজীপুর জেলার উপপরিচালক মেহেদী হাসান প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন। এ টাকার ভাগ বিভিন্ন জায়গায় যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পিকনিকের নামে বিভিন্ন হোটেল-বার ও প্রতিষ্ঠান থেকেও বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায় করেছেন। এ নিয়ে গাজীপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা হলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যদি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পিকনিক করে, তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব?
গত ২ মার্চ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল নানা ধরনের খাবারদাবার ও নাচ-গান। পিকনিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান চালাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। তাই তাদের বিভিন্ন দিবস ও প্রোগ্রামে সম্মানী দিতে হয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোয়ারা তো আছেই। চাহিদামতো টাকা না দিলে যত প্রকার হয়রানি আছে তার সবই করা হয়।
জানতে চাইলে ডিএনসির গাজীপুর জেলার উপপরিচালক (ডিডি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ পিকনিকে কারও কাছ থেকে কোনো চাঁদা তোলা হয়নি। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনপ্রতি দুই হাজার টাকা তুলে পিকনিকের খরচ নির্বাহ করা হয়। কেউ চাঁদাবাজি করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিডি মেহেদী হাসান যাদের দিয়ে চাঁদা আদায় করেন তাদের মধ্যে আছেন এএসআই তাজউদ্দিন। তিনি ডিডির বিশ্বস্ত। এ ছাড়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জামির ও উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুলের মাধ্যমে এ টাকা আদায় করে থাকেন। জানা গেছে, ডিডি মেহেদী দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর জেলায় থাকায় বিভিন্ন স্পটের মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। পিকনিকের চাঁদার বাইরে প্রতিষ্ঠানটি মাঠপর্যায় থেকে মাসোয়ারাও তোলে গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের সহযোগিতায়। তার সঙ্গে এএসআই জামিরও জড়িত রয়েছেন।