মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একটি সুশিক্ষিত জাতি তৈরি হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ এটির সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এসব মেধাবী উচ্চ শিক্ষার্থীরাই মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে।

শুধু তরুণদের মাঝে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তরুণীদের মাঝেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠেছে মাদক বিস্তারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের ভয় না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। মাদকাসক্ত অনেক শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। কারো কারো শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত থাকছে।

শুধু স্কুল-কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশে এমন কোনো পেশা নেই, যে পেশার মানুষ মাদকাসক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তারাও জড়িত এর সঙ্গে। এ কারণে অভিযানে মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও আসল গডফাদাররা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

মাদকাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি স্ট্রোকের হার সর্বাধিক। এছাড়া বদমেজাজ, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, অসংলগ্ন ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, ভুলে যাওয়া, দুর্বলচিত্ততা এবং হতাশা ইত্যাদি মানসিক বিকারের শিকার হয়।

মাদক প্রাপ্তির সহজলভ্যতা মাদক বিস্তারের অন্যতম কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনিয়রদের প্ররোচনায় অনেক নবীন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসেই মিলছে স্বল্পমূল্যে মাদক। তবে একের পর এক ব্যয়বহুল মাদকের সঙ্গে যুক্ত হতে হতে মাদকাসক্ত হয়ে কেউ কেউ হয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন। পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছেদও ঘটে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কৌশলে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইন, প্যাথিডিন, সিসা, সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেওয়া মাদক, ঘুমের ওষুধ, এলএসডি ইত্যাদি মাদকদ্রব্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বিস্তার করান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক-কর্মচারীরাও এর সঙ্গে জড়িত।

বড় ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতরা সন্ধ্যা হলেই মাদকের আসর বসায়। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশই বন্ধুদের প্ররোচনায় শুরু করেন। তারপর একে একে ব্যয়বহুল প্রাণঘাতী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা, পারিবারিক কোলাহল মাদকাসক্ত হওয়ার জন্য দায়ী। অনেকে আবার মাদক গ্রহণকে স্মার্টনেস মনে করে। মাদকাসক্তদের মধ্যে নিষ্ঠুরতার কার্যক্রম বেশি। তারা মাদকের টাকা জন্য পিতা-মাতাকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদকাসক্তি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও সুশীল সমাজসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে হবে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট অপরাধবিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। কার্যক্রমও চলছে। কিন্তু তারপরও মাদক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। আসলে এটা কী রোধ করতে চায় দায়িত্বশীল মহল? সদিচ্চা কী আছে? আমেরিকার মতো দেশ মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে অতীতের অনেক উদাহরণ আছে। যেমন এইডস নিয়ন্ত্রণে আছে। এইডস হলে মানুষ মারা যায়-এই সচেতনতা দেশের জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধেও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান চালাতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আমরা সর্বাধিক পরিমাণে মাদক উদ্ধার করছি, গ্রেফতার করছি। চার্জশিটও দিচ্ছি। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। মাদক তরুণদের অন্যতম ঘাতক। এটার বিরুদ্ধে অল-আউট অভিযান চালাতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দুই বছর ধরে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু এটা কারোর একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। নিরবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। যেভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এখনই রোধ করতে না পারলে, আগামীতে দেশ পরিচালনার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043370723724365