বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের কথা। বিএনপির সংসদ সদস্য ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের পছন্দে চাঁদপুরের কুচয়ায় ইউএনও পদে আনা হয় এক ভাইকে। কিছুদিন পর ইউএনও সাহেব তদবির করে তার ভাই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতাকে বসান কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে। সেই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে হঠাৎ নাজিল হয় আঞ্চলিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ নামীয় এক আদেশ। সেই আদেশবলে শিক্ষাবোর্ড কর্তারাই পারতেন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলি করতে। নতুন দোকানের বাণিজ্যের পুরো ননীটাই অর্থনীতির ওই শিক্ষকের প্লেটে। কারণ, তার ত্রাতা ভাই (ইউএনও) ইতিমধ্যে কচুয়ার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কচুকাটায় বিশেষ পারঙ্গম, মানে মন্ত্রীবসের Blue-eyed boy প্রমাণিত।
ওয়ান ইলেভেনের দুই বছর ঘাপটি মেরে থাকা শিক্ষা ক্যাডারের এই শিক্ষক ২০০৯-এর শেষে গাটঁছড়া বাঁধেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এপিএস [২০১৮-এর ডিসেম্বর থেকে বিদেশে পলাতক] মন্মথ বাড়ৈর সঙ্গে। দুর্নীতির দূর্গখ্যাত শিক্ষা ভবনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে সক্ষম হন সাবেক এই শিবির নেতা। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পে নিযুক্ত উপবৃত্তি বিতরণ কর্মকর্তাদের বদলি এবং রাজস্বখাতে নিতে কাগজে গোঁজামিলসহ নানা অপকর্ম করে কয়েককোটি টাকা কামানোর অভিযোগ তিনিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ঘুষের টাকা ভাগাভাগিতে বনিবনা না হওয়ায় কয়েকদিন বিপদে ছিলেন। এরপর বাগান পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব পদ। বই প্রকাশক সিন্ডিকেট, পাঠ্যবইয়ে বইয়ে ভুল ও ইতিহাস বিকৃতিসহ আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকাদের অন্যতম বনে যান তিনি।
২০১৯ এর কথা। জানুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডা: দীপু মনির দায়িত্বগ্রহণের পর শিক্ষা প্রশাসনে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের বদলি করেন এপ্রিলে। ঢাকা বোর্ডের বিতর্কিত তোফাসহ বাড়ৈ সিন্ডিকেটের ২২ জনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় এক আদেশে। এনসিটিবির সচিব পদ থেকে তাকেও স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয় ঠাকুরগাওয়ের একটা সরকারি কলেজে। বড় বদলিতে ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ৈ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাভারের একটা কলেজে বদলি হয়ে আসেন তিনি।
রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, অপরাপর কয়েকজন যোগ্য ও ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রার্থীকে পেছনে ফেলে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে গেছেন সাবেক এই শিবির নেতা। আরবি পড়তে, বলতে ও লিখতে না জানা শশ্রুমন্ডিত এই অধ্যাপকের জন্ম ৫ নভেম্বর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। তার সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ আগামী বছরের ৪ নভেম্বর। ২৮ নভেম্বর তাকেই চেয়ারম্যান পদে দেয়ার জন্য সারসংক্ষেপে সই করেছেন মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সিনিয়র সচিবও। ছুটিকালীন বিকল্প অতিরিক্ত সচিবও করেছেন সই। এমন কথাই ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মুখে মুখে রটছে।