মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব - দৈনিকশিক্ষা

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সর্বজনীন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে এক গুচ্ছ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ। একই সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু পরিবর্তনসহ প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি সংগঠনটির সভাপতি শাহিনুরআল-আমীন ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন (ভাপ্রা) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর এ প্রস্তাব করে ।

চিঠিতে বলা হয়, বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক ও বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তোলা জরুরি। আনন্দের সঙ্গে শিখন-শেখানো কার্যক্রম নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের অনুকূল পরিবেশ, শিক্ষাক্রম ও শিখন প্রক্রিয়াকে সহজতর ও উন্নত করতে হবে। 

তাদের প্রস্তাবগুলো হলো-১. প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন/সুবিধাদি দিতে হবে। ২. শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ১:২০ করতে হবে।

৩. প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। ৪. মিড-ডে মিল (যে স্কুলগুলোতে আগে থেকেই চলমান আছে) ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। 

৫. প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় যথাযথ মানের শিক্ষালাভ ও শিক্ষাদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুসমন্বিত সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৬. চরাঞ্চল, হাওর, পাহাড়ী প্রভৃতি দূর্গম অঞ্চলের জনগোষ্টী এবং বস্তি, অবহেলিত, সামাজিকভাবে উপেক্ষিত জনগোষ্ঠীর সব ধরনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

৭. সকল ধরনের প্রভাবমুক্ত শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

৮. কওমি মাদরাসার শিক্ষাবব্যস্থাকে মূলধারার কাছাকাছি আনার জন্য সুনির্দিষ্ট বব্যস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদরাসা বোর্ডের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে, ক্রমান্বয়ে সব কওমি মাদরাসাকে আনার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে এইসব মাদরাসার নিবন্ধন থাকতে হবে।

৯. শ্রমজীবী শিশুদের অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় পর্যায় সান্ধ্যকালীন বিদ্যালয় চালু করতে হবে। ১০. সকল পর্যায় নৈতিক শিক্ষার বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করতে হবে। ১১. স্কুল বব্যস্থাপনা কমিটি থাকবে। তবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বরাদ্দে তাদের কোনো প্রকার প্রভাব থাকবে না এবং এই কমিটির সভাপতি স্নাতকোত্তর হতে হবে।

১২. শিক্ষার বাণিজ্যিককরণ রোধে পর্যাপ্ত শিক্ষক, গ্রহণযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, যথাযথ শিক্ষা উপকরণের সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে স্কুলে এমনভাবে পাঠদান করতে হবে, যাতে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং পদ্ধতি নিরুৎসাহিত হয়।

১৩. উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ১৪. জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে এবং ১৫. সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়। 
নতুন শিক্ষাক্রমে কিছু পরিবর্তন বিষয়েও সংগঠনটি প্রস্তাব করেছে। মূল্যায়নে অবশ্যই বার্ষিক তিনটি সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকতে হবে। পাঠ্য বই থেকে বিতর্কিত অধ্যায় বাদ দিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও তার সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। 

এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো হলো-১. প্রাথমিকে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রস্তাব হলো-সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদ হবে। ৮ বছর চাকরি পূর্ণ হলে একটা সিনিয়র স্কেল পাবেন। ক. সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রি স্কেল দিতে হবে-১০ম গ্রেড খ. ৮ বছর পর সিনিয়র স্কেল পাবেন- ৯ম গ্রেড গ. সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রমোশনে- ৮ম গ্রেড ঘ. প্রধান শিক্ষক প্রমোশনে ৭ম গ্রেড।

২. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দ্রুত বাস্তবায়নসহ মহা-পরিচালক পর্যন্ত যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে। ৩. প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত বিভাগীয় নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ৪. প্রতি তিন বছর পর পর স্বয়ংক্রীয়ভাবে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা দিতে হবে। ৫. নন-ভ্যাকেশনাল ঘোষণা করে সরকারের অন্য ডিপার্টমেন্টের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ৬. প্রথম যোগদানের তারিখ ধরে জাতীয় পর্যায়ে একটা গ্রেডেশন করতে হবে। ৭. চাকরি ২ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রীয়ভাবে স্থায়ী করণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ৮. নাম মাত্র টিফিন ভাতা মাসিক ২০০ টাকার স্থলে ন্যুনতম ৩০০০টাকায় উন্নিত করতে হবে। ৯. মাসিক সমন্বয় সভায় সহকারী শিক্ষক প্রতিনিধি উপস্থিত নিশ্চিত করতে হবে। ১০. পদোন্নতির জন্য উপজেলা পর্যায় গ্রেডেশন হচ্ছে। যেখানে ভিন্ন উপজেলা হতে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকদেরও বদলিকৃত উপজেলায় যোগদানের তারিখ থেকে সিনিয়রিটি গনণা করা হচ্ছে। যাতে করে পেছনের চাকরিকাল বাদ পড়ছে। 

১১. স্বাধীনতার পর থেকে সব নিয়োগবিধিতেই সহকারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগবিধিতেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে শিক্ষকদের জন্য ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত ছিলো। কিন্তু সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা ২০২১-এ প্রধান শিক্ষকদেও সহকারী উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সুযোগ রাখা হলেও সহকারী শিক্ষকদেরও বঞ্চিত করা হয়েছে। নিয়োগবিধি সংশোধন করে বয়সের বার শিথিল করে সহকারী শিক্ষকদেরও বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ রাখা প্রয়োজন।

১২. সিনিয়র শিক্ষক কোন কোন ক্ষেত্রে জুনিয়র শিক্ষকদের থেকে বেতন কম পান সেক্ষেত্রে বেতন সমতা আইন পুনরায় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077431201934814