বইমেলাটা অনেকদিনের বিরতির পর এবার খোলামেলা পরিবেশে আগের মতো হচ্ছে। অনেক স্বস্তি নিয়ে মানুষ বইমেলায় যাচ্ছে। ফলে আমাদের পুরনো মেলাটাই ফিরে পেয়েছে মানুষ, এটাই মনে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু আসলে এর পেছনে একটা অস্বস্তি কাজ করছে। করোনার কারণে যত না, তারচেয়ে বেশি হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের পর যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে তা বলাবাহুল্য। আমাদের ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে অনেক কিছুরই তো দাম বেড়েছে। বইমেলায় এর প্রভাব ফেলছে।
বইমেলায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কাগজের দাম বেড়েছে ভয়ানকভাবে। প্রকাশকরা তো বই বিক্রি করেই ব্যবসা করেন। এখনো যে বড় ব্যবসা করতে পারেন তা নয়, যদিও এখনো এটা শিল্প হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রণোদনা বলি আর যাই বলি না কেন, বড় বড় শিল্পকে দেয়া হলেও কিন্তু প্রকাশনা শিল্পে কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি। অথচ এই খাতটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। যে কারণে বইয়ের দাম বাড়বে। মূল্যস্ফীতির কারণে পাশাপাশি সব জিনিসেরই দাম বেড়ে গেছে।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, বই কেনে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তরাই। উচ্চবিত্তরা বই কেনেন সে রকম নজির খুব একটা দেখছি না। বিশেষ করে বাংলা বই। ফলে এদের যখন সংসারে কাটছাঁট করতে হবে, তখন বইকেনার বাজেটও কমবে। সেজন্য একটা বড় প্রভাব বইকেনায় পড়ছে। বইমেলায় মানুষ যাবে, কিন্তু বই কেনায় উৎসাহ কিছুটা প্রভাব পড়ছে। যতটা বই বিক্রি হয়, তার থেকে মানুষে মানুষে যদি কিছুটা আদান-প্রদান হয়, তাহলে একটা মেলা মেলা ভাব থাকে। এটিও মন্দ না। খুশি হতাম যদি মানুষ বই কিনতেন। এটা আমাদের এখানে হয় না। তবে কলকাতায় হয়। কারণ বইমেলার বহু দিনের ঐতিহ্য। তারা বইমেলায় প্রচুর বই কেনেন। ওখানে ১০ দিনে যে বই বিক্রি হয়, এখানে এক মাসেও তা হয় না।
তিনি বলেন, আমি চাই সরকার বইমেলায় প্রকাশকদের জন্য একটা প্রণোদনা প্যাকেজ করুক। বাংলা একাডেমি স্টল বাবদ যত ভাড়া নিচ্ছে তার সবই মওকুফ করে দিক, প্যাভিলিয়ন যারা নিচ্ছে তারা তো বই বিক্রি করেই। বিশেষ করে ছোট ছোট যে প্রকাশকরা বই বিক্রি করতে পারবেন না তাদের প্রণোদনা দেয়া হোক।
প্রত্যেক স্টলে যে এক থেকে দুজন বিক্রয় প্রতিনিধি থাকে তাদের এককালীন সম্মানীর ব্যবস্থা করুক। ছোট প্রকাশকদের জন্য এটা বড় একটা প্রাপ্তি। এতে ছোট প্রকাশকদের চাপ কমবে। এটা দেয়ার দুটো উদ্দেশ্য- সরকারের দায়িত্বের বিষয়টি প্রমাণ করে এবং সরকার বইবান্ধব।এই শিক্ষাবিদ বলেন, সাধারণত শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ নেই। এটা আমাদের অনেক দিনের দুঃখ। কিন্তু বই বাজারে এমনটা হওয়া দুঃখজনক। কারণ বই যত প্রকাশ হবে, মানুষ তত পড়বে। মানুষের মন পরিচ্ছন্ন হবে। অপসংস্কৃতি ধীরে ধীরে কমবে। এটা সরকারের মনে থাকা উচিত। কারণ বই পড়া বা বইয়ে বিনিয়োগের ফল আসে দীর্ঘমেয়াদি। এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।